নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মেহেরপুর জেলার গমক্ষেত। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। প্রতিকূল আবহাওয়ায় রোগবালাই বেশি হচ্ছে। জোরালো প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
অপরদিকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মাঠে নেমেছেন বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএমডাব্লিউআরআই) গবেষকরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় ১১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর বেশি। আর গেল বছরের চেয়ে এবার ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর বেশি জমিতে গম আবাদ হয়েছে।
চাষিরা জানান, গেল বছরের বোরো মৌসুম থেকে এ সময় পর্যন্ত ধানের দর পতন হয়েছে। ফলে চাষিরা লাভজনক গম আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। উচ্চ ফলনশীল ও ব্লাস্ট প্রতিরোধী বারি গম ৩৩, রোগ সহনশীল বারি গম ৩০ ছাড়াও আবাদ হয়েছে বিভিন্ন জাতের গম। এর মধ্যে বারি গম ২৪ (প্রদীপ), বারি গম ২৬, বারি গম ২৩ জাতে রোগবালাই বেশি দেখা দিয়েছে। তবে বারি গম ৩০ ও বারি গম ৩৩ জাতের ক্ষেতগুলোতে এখনো কোনো রোগবালাই দেখা যায়নি।
বিভিন্ন মাঠ ঘুরে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসে দু’দফা বৃষ্টির পর আগাম আবাদকৃত গমের পাতা গোড়া থেকে হলুদ হয়ে যাচ্ছে। কৃষি অফিস এ রোগকে গমের পাতা মরিচা রোগ বলে চিহ্নিত করেছে।
অপরদিকে কিছু কিছু ক্ষেতে হেড ব্লাইট দেখা দিয়েছে। হেড ব্লাইট আক্রান্ত ক্ষেতে ফলন কমে যাবে। এছাড়াও কার্তিক মাসের শুরুতে যারা গম বীজ বপন করেছিলেন এমন কিছু ক্ষেতে হুইট ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে।
এদিকে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিনিধি দল আক্রান্ত ক্ষেত পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
গবেষণা দলের সদস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রেজাউল কবির জানান, মরিচা ও হেড ব্লাইট রোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেতে হুইট ব্লাস্টও পাওয়া গেছে। এসব রোগ প্রতিরোধে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, গম ক্ষেতে যেসব রোগ চিহ্নিত করা হয়েছে তা প্রতিকারে চাষিদেরকে দ্রুত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে বলা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মেহেরপুর জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৮টি জেলায় বাংলাদেশে প্রথম হুইট ব্লাস্ট আক্রমণ দেখা দেয়। পরের বছর থেকে গম আবাদে ভাটা পড়ে। তবে গেল বছর থেকে ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও রোগ বালাই সহিষ্ণু জাত আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে চাষিরা আবারো গম চাষে আগ্রহী হয়েছেন।