স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরেও জিম্মি দশা কাটেনি রাঙামাটির যাত্রী সমাজের। ক্ষমতা ও পেশি শক্তির জোরে চট্টগ্রাম-রাউজান ও রাঙামাটির একটি সিন্ডিকেট বাস মালিক সমিতির নামে বছরের পর বছর তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না স্থানীয় প্রশাসন।
১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটর মালিক সমিতির ২৫৬টি বাস রয়েছে কাগজে পত্রে। তার মধ্যে রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রামগামী চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে অন্তত শতাধিক বাসের কোনো ধরনের রুট পারমিট নেই বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব দেখভালে থাকা প্রশাসনিক যন্ত্রগুলো নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। যাত্রী সাধারণের দাবি বাস্তবায়নসহ পরিবহন সেক্টরের উন্নয়ন ও অসঙ্গতি নিয়ে প্রতিমাসে বিআরটিএ কর্তৃক আরটিএ মিটিং করার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে রাঙামাটিতে এই বৈঠক হয় বছরে দু’একবার।
মোটর মালিক সমিতি কর্তৃপক্ষ রাঙামাটি রুটে বিলাস বহুল কয়েকটি বাসের মালিকদের কাছ থেকে সদস্য ফির নামে আদায় করেছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে। রাঙামাটি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি যাত্রীবাহী বাস থেকে আদায় করা হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫১০ টাকা। তার মধ্যে মালিক সমিতি ৩৫০, শ্রমিক ফেডারেশন- ১০ ও শ্রমিক ইউনিয়নের নামে নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। এছাড়াও এই রুটে চলাচলকারী পাহাড়িকা বাসগুলো থেকেও নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে না পৌঁছানোর অজুহাতে মিনিট হিসেব করে জরিমানা নেওয়া হয় ১০ থেকে ২০ টাকা হারে।
রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৬৯ কিলোমিটার সড়ক। কিলোমিটার প্রতি সরকারি হিসেবে রাঙামাটি হতে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো মুরাদপুর পর্যন্ত ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৯০টাকা। কিন্তু ১২০ টাকা ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের অক্সিজেন পর্যন্ত।
জানা গেছে, এই রুটটিতে চলাচলকারী বাসগুলোর এক তৃতীয়াংশই হচ্ছে সমতলে চলা হানিফ ও এস আলম কোম্পানির মেয়াদোত্তীর্ণ বাসগুলো। মেয়াদোত্তীর্ণ এসকল বাসের একটিরও রাঙামাটির রুট পারমিট নেই। প্রশাসন এসব বাসের বিরুদ্ধে রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিষয়টি নিয়ে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাস মালিক জানিয়েছেন, গত ৮ থেকে ১০ বছর যাবৎ চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটর মালিক সমিতির কোনো নির্বাচনও দেওয়া হয়নি।
রাঙামাটি চট্টগ্রাম মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. ছৈয়দ আহাম্মদ জানিয়েছেন, আমরা সমিতির সদস্য অন্তর্ভুক্তির জন্য সমিতির জায়গার ভ্যালুয়েশন ধরেই চার লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেনে যাওয়ার পাহাড়িকা বাসে জনপ্রতি ১২০ টাকা যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সেটি প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করেই নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কেউই আমাদেরকে জানায়নি আর আমরাও কাউকে কোনো অপকর্মের অনুমতি দেইনি। এসব বিষয়ে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক সময়ে রাঙামাটি রুটে বাসের চালক থাকা ব্যক্তিরাই সংসদ সদস্যের আশীর্বাদে এখন চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটর মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়েছে। এক দশকের ব্যবধানেই এরা এখন ব্যক্তিগত কয়েকটি ইটভাটা থেকে শুরু করে ৩/৪টি বাসের মালিক বনে গেছেন। তাদের রয়েছে আলিশান বাড়ি ও গাড়ি। চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আদায় করে কোটিপতি বনে যাওয়া মালিক সমিতির এসব নেতার আসল আয়ের উৎস খোঁজার দাবিও তুলেছে সাধারণ বাস মালিক ও শ্রমিকরা। যাত্রীসেবার নামে যাচ্ছে তাই সেবা দিলেও এই সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলছে না। এই সিন্ডিকেট প্রায় ছয় লাখ রাঙামাটিবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে।