মৃত্যুর ৫১ বছর পরেও ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত ময়মনসিংহের গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুল হক হারুনের আত্মত্যাগ রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর তার স্মরণে পৌর শহরে খাস জমিতে ‘শহীদ হারুন পার্ক’ গড়ে তোলা হলেও ওই জমি সরকারি বরাদ্দ পায়নি। তাই হারুনের নামে গড়ে উঠা পার্কটি ভবিষ্যতে থাকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, পূর্ব-পাকিস্তানী শাসকদের পতনের দাবিতে গণআন্দোলনের ডাকে ১৯৬৯ সালে ২৭ জানুয়ারি গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ধানমহালে আসতেই জেলা সাব ডিভিশনাল অফিসার (এসডিও) নির্দেশে পুলিশের দারোগা এমএ মল্লিকের নেতৃত্বে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ ও গুলি করে। এতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক হারুন নিহত হন।
মুক্তিযোদ্ধা কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ওইদিন গুলিবিদ্ধ হারুনের মরদেহ আনতে থানায় গেলে পুলিশ আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বের করে দেয়। পরে পুলিশ হারুনের মরদেহ নান্দাইলে তার বাড়ি পাঠায়। এই ঘটনার কিছুদিন পর গুলি চালানোর নির্দেশদাতা এসডিও গৌরীপুর আসলে আমরা তাকে ধরে ব্যাপক মারধর করি। এইসব ঘটনা গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসের অংশ। কিন্তু মৃত্যুর এত বছর পরেও শহীদ হারুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়াটা দুঃখজনক।
প্রবীণ সাংবাদিক সুপ্রিয় ধর বাচ্চু বলেন, আমার বাবা ও মা দুজনেই নেতাজী সুভাষ বসুর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ২৭ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে হারুন নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আকাশবানী কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে খবর পাঠক নীলিমা সান্যাল হারুন নিহতের খবরটি প্রচার করে। এর পরপরই পুলিশ আমাদের বাড়ি ঘর তল্লাশি করে তছনছ করে। পুলিশের সন্দেহ ছিলো আমার বাবা ও মা ভারতীয় গোয়েন্দো বাহিনীর চর হিসাবে কাজ করে ওই খবর কলকাতা পাঠিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হারুন পার্কের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ছে। প্রাচীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড। পার্কের ফটক না থাকায় কুকুর ও বিড়াল অবাধে বিচরণ করছে। পার্কের ভেতর শহীদ মিনারের গাঁ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে স্যানেটারি কারখানা। হারুন স্মৃতি স্তম্ভের গা ঘেঁষে যত্রতত্র প্রসাব-পায়খানা করতে দেখা গেছে মানুষকে।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম বলেন, হারুন পার্কের ৪২ শতাংশ জমি খাস জমির মধ্যে সরকারি বরাদ্দে সোয়া ৮ শতাংশ জমিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করা হয়েছে। ৩ শতাংশ জমি মসজিদ ও ড্রেন দখল করে নিয়েছে। তবে জমির শ্রেণির পরিবর্তন নিয়ে জটিলতা থাকার কারণে হারুন পার্কের নামে বাকি জমিটুকু বরাদ্দ নেয়া যাচ্ছে না।
ইউএনও সেজুতি ধর বলেন, শহীদ হারুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, হারুন পার্কের নামে জমি বরাদ্দ ও পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।