সেন্টমার্টিন থেকে: দেশের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শীত মৌসুমে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসেন। কিন্তু টেকনাফ থেকে জাহাজগুলো যখন সেন্টমার্টিন জেটিতে ভিড়ে তখনই শঙ্কায় পড়ে পর্যটকরা। কারণ প্রায় দেড়যুগ আগে নির্মিত হওয়া জেটি আর সংস্কার হয়নি। এতে জাহাজ থেকে নামাতে গিয়ে বা জেটি পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়রা জানায়, ২০০৪ সালে সিএমএম কনসোর্টিয়াম মালিকের ঠিকাদারিতে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেন্টমার্টিনের একমাত্র আধুনিক জেটি। দীর্ঘদিন ধরে জেটির রেলিং পূর্ব পাশের পার্কিং ও গাইড ভিম, স্প্রিং ভিম সাগরের বুকে চলে যায়। জেটির নিচে বেশির ভাগই পলেস্তার উঠে রড দেখা যাচ্ছে। ফলে যেকোন মুহূর্তে দুর্ঘটনার সম্ভবনা রয়েছে। সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ফণী ও টর্নেডোর আঘাতে প্রবল ঢেউয়ে জেটিতে ভয়াবহ ভাঙন ও ফাটল তীব্র হয়েছে। এ জেটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো নজর নেই বললেই চলে। এতে স্থানীয় দ্বীপ বাসীর মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।
জানা যায়, সেন্টমার্টিনে ছোট, বড় ৫০-১০০টি আবাসিক হোটেল, বাড়ি ঘর, কটেজ, রেস্টুরেন্ট, ১ শ'-২ শ' দোকান ১ শ' ১৪ টি ভ্যান ও রিকশা, ২৫টি সার্ভিস বোট, দ্বীপে বসবাসরত ১০ হাজার মানুষসহ সবাই পর্জটক মৌসুমে আয় করার জন্য অপেক্ষায় থাকে। কখন পর্যটক মৌসুম আসবে।
সেন্টমার্টিনের পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, জেটির স্পিং ভিম ভাঙনে সেন্টমার্টিনের সার্ভিস বোট ভিড়তে না পেরে বর্ষাকালে সাগরের মাঝখানে নোঙর দিয়ে গভীর বঙ্গোপসাগরে লবণাক্ত পানিতে যাত্রী নামানো হচ্ছে। চলতি পর্যটক মৌসুমে প্রবল ঢেউ, বাতাসের কারণে পর্যটকবাহী জাহাজের ধাক্কায়ও জেটি পার্কিংয়ের কিছুটা ফাটল দেখা যায়। বর্ষাকালে বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে জেটির পূর্বের পাশের পার্কিংয়ের গাইড ভিম বিলীন হয়ে সাগরের পানিতে ডুবে গেছে। ফলে প্রতিনিয়ত পর্যটকবাহী জাহাজ ও সার্ভিস বোট ঝুঁকিতে যাত্রীসহ ওঠা-নামা করছে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সামিরা-সোলায়মান দম্পতি বলেন, জেটির ভয়াবহ ভাঙনে পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমাটিন দ্বীপে আসলেও ভিড়তে সময় লাগে। তাই আমাদের সুবিধার জন্য দ্রুত সংস্কার করে আরও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ওঠা-নামা করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
সেন্টমাটিন সার্ভিস বোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলম বার্তা২৪.কমকে জানান, সেন্টমাটিন জেটিটির ভয়াবহ ভাঙনে গাইড ভিম না থাকায় সার্ভিস বোট সেখানে ভিড়তে পারেনা। পর্যটকবাহী ১ টি জাহাজ ভিড়লেও অন্য জাহাজ ভিড়তে না পেরে বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে নোঙর করে অপেক্ষা করতে হয়। বিকল্প ব্যবস্থায় যাত্রী ওঠা-নামা করেন। ঝুঁকিপূর্ণ জেটির দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
টেকনাফ কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজের ইনচার্জ মো. শাহ আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, সেন্টমাটিন দ্বীপবাসীর একমাত্র যাতায়াতের জেটি ভাঙনে আগত পর্যটকদের নির্বিঘ্নে ওঠা-নামা করতে নতুন জেটির বিকল্প নেই। তাই প্রতি বছরের ন্যায় ভাল কাঠ দিয়ে দ্রুত সংস্কার করে পর্যটকবাহী জাহাজ ভিড়তে উপযুক্ত করে দিতে জেলা পরিষদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত বছর ৫ লাখ টাকায় জেটির রেলিং সংস্কার করা হয়েছে। বর্ষাকালে প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে জেটিতে আবার ফাটল দেখা দেয়। বিদ্যমান জেটির দক্ষিণ পাশে নতুন জেটি নির্মাণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিন দ্বীপটিতে প্রতি মৌসুমে লাখো পর্যটক ভ্রমণে আসে। যা গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার। এতে যেকোনো সময় পর্যটকরা বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। জেটি সংস্থার করে নিরাপদ ভ্রমণ সেবা চান দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব পর্যটকরা।