শাহপরীরদ্বীপ থেকে ফিরে: ২০১২ সালে জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউপির শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যায়। তাৎক্ষণিক রোধে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় সে ভাঙন বেড়ে দাঁড়ায় তিন কিলোমিটারে।
অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে ১২ গ্রামের ফসলি জমি ও লবণের দুই হাজার ৩০০ একর জমিতে লবণ চাষাবাদ বন্ধ ছিল সাড়ে সাত বছরের বেশি সময়। এছাড়াও প্রতিবছর বর্ষায় প্লাবিত হয়ে এলাকা ছাড়তে হয় শত শত লোকজনকে। চলতি বছরের জুন মাসেই শেষ হচ্ছে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ। এতে দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে শাহপরীর দ্বীপের মানুষের।
জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ শেষ হলে বদলে যাবে শাহপরীর দ্বীপের হাজারো মানুষের জীবন। জলোচ্ছ্বাস ও সাগরের আগ্রাসনের আতঙ্ক কেটে যাবে। শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়ের সে অপেক্ষায় শাহপরীর দ্বীপবাসী। বেড়িবাঁধের ভাঙা ক্ষত দিয়ে বার বার আঘাত করতো সাগর। সে ক্ষত মুছে দিচ্ছে বর্তমান সরকার। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর ১২১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয় শাহপরীর দ্বীপ ভাঙা বেড়িবাঁধের (৩.৩৫ কিলোমিটার টেকসই প্রতিরক্ষা বাঁধ)। চলতি বছরের জুনের শেষের দিকেই শেষ হচ্ছে এ প্রকল্পের কাজ।
এলাকাবাসী জানায়, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। ট্রাকে করে বেড়িবাঁধে মাটি ও শত শত ব্লক ফেলা হচ্ছে নির্মিত বাঁধের ওপর। বাঁধের পূর্ব পাশে বিশাল এলাকা জুড়ে শত শত চাষিরা লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠে কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগে একবার জোয়ারের পানি ঢুকলেই তা ১০-১২ দিনেও নামতো না। কারণ এসব স্থানে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই এতোদিন ধরে চাষাবাদ বন্ধ ছিল। এখন বেড়িবাঁধ হওয়ায় পুরোদমে লবণ চাষ শুরু হয়েছে।
সাগর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিবছর এসব জমিতে লবণ চাষ করে যা আয় হতো, তা দিয়ে সংসার চলত। এতো দিন বন্ধ থাকায় প্রায় দেড় হাজার চাষির অনেক কষ্টে দিন কাটছে। এখন বেড়িবাঁধ হওয়ায় চাষাবাদ শুরু করতে পারায় উৎসব আমেজ চলছে পরিবারগুলোর মধ্যে।
লবণ চাষি ছোটন মিয়া বলেন, এতো পানির কারণে লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকায় নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু বেড়িবাঁধ হওয়ায় এখন আর পানি আসবে না। তাই আবারো লবণ উৎপাদন শুরু করছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, এতোদিন শত শত মণ লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি আমন মৌসুমেও কিছু জমিতে চাষাবাদ হতো সেগুলোও খালি পড়ে ছিল। এবার আমন চাষাবাদ হবে বলে আশা করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় অনেক দুর্ভোগে পড়েছিল শাহপরীর দ্বীপবাসী। এখন হয়তো দুর্ভোগের অবসান ঘটবে। কারণ টেকসই প্রতিরক্ষা বাঁধ আমরা দৃশ্যমান দেখছি এবং দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসছে।
সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপহার আজীবন মনে রাখবে শাহপরীর দ্বীপের মানুষ। এই একটি বেড়িবাঁধের কারণে সাড়ে সাতটি বছর বিচ্ছিন্ন ছিল এসব মানুষ। এ বেড়িবাঁধের মাধ্যমে সচল হয়েছে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। আশা করছি নতুন একটি পর্যটন শহরে রূপান্তর হবে শাহপরীর দ্বীপ।
এদিকে, দ্বীপবাসীকে আর পানির ভয়ে এলাকা ছাড়তে হবে না বলে ঘোষণা দিয়ে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে যান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১২১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহপরীর দ্বীপে ৩.৩৫ কিলোমিটার টেকসই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের জুন মাসে কাজটি সম্পন্ন হবে। এতে এই দ্বীপ আর প্লাবিত হবে না। এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশা শেষ হয়ে যাবে। বর্ষাকালে আর কাউকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে না। এ বাঁধের ওপর একটি সড়ক নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।