মাঘের মিষ্টি রোদের উত্তাপ গায়ে মেখে রক্তিম ফুলে সেজেছে ‘ফুলের রাজধানী’ খ্যাত যশোরের গদখালি-পানিসারা। টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ ফুলের সংমিশ্রণে নতুন রূপে প্রকৃতি হয়েছে একাকার। গোটা এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন দোল খাচ্ছে জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, হলুদ গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকাসহ হরেক রকমের ফুল। বাতাসে ফুটন্ত ফুলের দোলে রঙ লেগেছে ফুলচাষিদের মনেও। ফুলের হাসি তাই তাদের চোখে মুখে। আর এই হাসি নিয়েই ফুলে রঙে রঙিন স্বপ্ন দেখতে ফুল পরিচর্যায় ব্যস্ত এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঝিকরগাছা গদখালি-পানিসারার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পহেলা বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা এবং মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, যশোর জেলার আট উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। তার মধ্যে শুধুমাত্রই ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। সারা বছর ফুল উৎপাদন করলেও বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি এই তিন দিবসকে ঘিরেই মূল লক্ষ্য থাকে ফুলচাষিদের। আর এ তিনটি দিবসে ফুল বিক্রি করেই মূলত সারা বছরের লাভ-ক্ষতির হিসাব মেলান এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি এলাকার কৃষক সালাম হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে গোলাপ ও ১৫ কাঠা জমিতে জারবেরা ফুলের আবাদ করেছি। ফেব্রুয়ারি মাসের ফুলের চাহিদা মেটাতে এখন জমিতে ওষুধ স্প্রে করছি। কিছু দিন পরই বাজার ভালো পাওয়ার আশা করছি।
একই এলাকার মহিলা ফুলচাষি সাজেদা বেগম জানান, তিনি এবার এক বিঘা জমিতে গাঁদা, এক বিঘা জমিতে জারবেরা ও ১৫ কাঠা জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেছেন। দিবস গুলোতে তার জমি থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকার ফুল বিক্রি করার আশা করছেন তিনি।
পানিসারা এলাকার কৃষক সেলিম গাজী জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন। এরই মধ্যে জমিতে সেচ ও সার দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ২ থেকে ৪ টাকা দরে গোলাপ, ৫ টাকা দরে জারবেরা, ৩ টাকা দরে গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসে এই সব ফুল দুই থেকে তিনগুণ দাম বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, ফুল চাষাবাদ খুবই লাভজনক চাষ। এই মাসে আরও ভালো দাম পাব এই আশায় নিয়মিত পরিচর্যা করছি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ফুলের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। বিশেষ করে আমাদের যশোর জেলার ফুলের গুণগত মান ভালো থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে পরিবহন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় অনেক সময় ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বার্তা২৪.কমকে জানান, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলচাষ আবাদ পরিচালনা করে। এবারের বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে গদখালি এলাকার কৃষকরা ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ফুল সরবরাহ করবে বলে তিনি আশাবাদী।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বার্তা ২৪.কমকে জানান, এই জেলায় সবচেয়ে বেশি ফুলের চাষ হয় ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারা এলাকায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফুল চাষ বেশি হয়েছে।