পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ায় সমতল ভূমিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন পঞ্চাশ হাজার পাথর শ্রমিক। কাজ বন্ধে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কাজ না পেয়ে পাথর শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছেন। শ্রমিকদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। বিষণ্ন চেহারা। মনে মনে কষছে হিসাব। কীভাবে চলবে সংসার।
জানা যায়, দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে এ এলাকার মানুষের প্রধান পেশা পাথর উত্তোলন। এর সঙ্গে জড়িত উপজেলার হাজার হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিক। পাথরের রাজ্য তেঁতুলিয়ায় কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল রাতের আধারে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে গভীরে মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করেছিলো। পরে স্থানীয় প্রশাসন ছয়মাস আগে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধের পাশাপাশি সমতল ভূমিতেও পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়।
এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ার ভজনপুর বাজারে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের দাবিতে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করলে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে এক পাথর শ্রমিক নিহত হয়। আহত পুলিশসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক। এঘটনায় ওই দিন রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে ৭৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত প্রায় ৪/৫ হাজার জনের নামে দুটি মামলা করা হয়। একটি হত্যা মামলা, অন্যটি সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর। মামলার পর থেকে পুরো এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
তেঁতুলিয়ার পাথর শ্রমিক তসলিম উদ্দিন বলেন, পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। একদিকে সংসার ও কিস্তির জ্বালা অন্যদিকে পুলিশের ভয়ে বাড়ি যেতে পারছি না। কি যে করি কিছু মাথায় আসছে না। আমাদের দিকে তাকানোর কেউ কি নেই?
নারী শ্রমিক হাজেরা খাতুন বলেন, পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের রুজি বন্ধ গেছে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আছি। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই।
এবিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা মাটিকাটা ও পাথর উত্তোলন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মুক্তারুল হক মুকু জানান, হঠাৎ করে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন জীবন যাপন করছে উপজেলার প্রায় পঞ্চাশ হাজার পাথর শ্রমিক। আমাদেরকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।