ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার এলাকা থেকে গত ২১ জানুয়ারি উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত মরদেহের পরিচয় মিলেছে। নিহতের নাম মো. মোক্তার হোসেন সৈকত (২৮)। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার দেওপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল ওয়াহেদের ছেলে। ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন পদ্ধতি অবলম্বন করে তার পরিচয় নিশ্চিত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লা জেলার সদস্যরা।
এদিকে, ওইদিন মরদেহটি উদ্ধারের পর চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার হাইওয়ে ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরাসহ সকলে মনে করেন নিহত ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তবে ঘটনাটির আলামত দেখে ভিন্ন কিছু সন্দেহ হয় পিবিআই, কুমিল্লার সদস্যদের। এ ঘটনাটি নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেন তারা। টানা ১৬ দিন ছায়া তদন্তের পর পিবিআই, কুমিল্লা টিমের সদস্যরা নিশ্চিত হন, সড়ক দুর্ঘটনায় নয়, সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্রের সদস্যদের হাতে খুনের শিকার হয়েছেন মোক্তার হোসেন সৈকত। এরপর পিবিআইয়ের ছায়া তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে পুরো হত্যার রহস্য। আর হত্যায় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকারসহ তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে পিবিআই কুমিল্লা জেলা প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ওসমান গণি বার্তা২৪.কমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, গত ২১ জানুয়ারি উদ্ধার হওয়া মৃত ব্যক্তিটির মাথা ও মুখ সম্পূর্ণ থেঁতলানো ও বিকৃত অবস্থায় ছিল। তারা প্রথমে ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন পদ্ধতি অবলম্বন করে ভিকটিমের সঠিক পরিচয় উদঘাটন করেন। পরিচয় পাওয়ার পর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় সকলের ধারণা ছিল ভিকটিম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তবে পিবিআই কুমিল্লা জেলার ইউনিট ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।
ছায়া তদন্তে বেড়িয়ে আসে ভিকটিম সৈকত গত ১৮ জানুয়ারি দুপুরে তার গ্রামের বাড়ি থেকে বের হয়ে চাঁদপুরে যান। চাঁদপুর থেকে ২০ জানুয়ারি কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় আসেন। ২১ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৪টায় মহাসড়কে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তবে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা নিয়ে যায়।
মোহাম্মদ ওসমান গণি জানান, উক্ত মোবাইলফোনের সূত্র ধরে পিবিআই কুমিল্লা জেলা টিম গত ২১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১৬ দিন এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত সম্পন্ন করে ফেনী শহর থেকে আবুল হাসনাত ওরফে তারেক নামে একজনকে গ্রেফতার করে। তিনি ফেনী সদরের নোয়াবাদ নুরুজ্জামান গ্রামের আবুল বসরের ছেলে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ফেনী সদরের দক্ষিণ শর্শদি খানের সৈয়দ নুরুল আমিনের ছেলে হাফিজুর রহমান সাইফুল এবং লাকসামের বাতাখালি গ্রামের মো. রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়।
এরপর ৩ জনেই স্বীকার করে যে, তারা গত ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যার পরে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিনতাইয়ের উদ্দেশে বের হয়। তারা ফেনী থেকে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা জেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড পর্যন্ত কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ছিনতাই করে। এরপর কুমিল্লা থেকে ফেনী শহরে ফেরত যাওয়ার সময় রাত দেড়টার দিকে চৌদ্দগ্রাম থেকে সৈকতকে জোর করে প্রাইভেটকারে তুলে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় সৈকত তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করলে তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে প্রাইভেটকার থেকে ফেলে দেয় এবং ওই প্রাইভেটকার দিয়ে চাপা দিয়ে খুন করে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।