ভেড়ার চেয়ে আকারে বড় ও মাংসের পরিমাণ বেশি। তবে দেখতে ভেড়ার মতই। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছেন ‘গাড়ল’। মেহেরপুরের মুজিবনগর এলাকায় ব্যাপকভাবে গাড়ল পালনের পর তা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। ভেড়া পালনের জায়গা এখন গাড়লের দখলে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, দেশীয় ভেড়ার জাত উন্নয়নে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মুজিবনগর এলাকার গাড়ল পালনকারীরা। ভারতীয় বড় জাতের ভেড়ার সাথে দেশীয় ভেড়ার ক্রস করে উন্নত জাতের ভেড়ার বাচ্চা উৎপাদন করছেন। এ জাতের ভেড়া দেশীয় ভেড়ার চেয়ে আকারে বড় এবং মাংস দ্বিগুণ হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন খামারিরা। মেহেরপুর জেলার অনেক বাড়িতে দুয়েকটি পালনের পাশাপাশি অনেক খামারও গড়ে উঠেছে।
খামারি ও ভেড়া পালনকারীরা বলছেন, মুজিবনগর এলাকায় রাস্তাঘাট কিংবা মাঠে-ঘাটে হরহামেশাই দেখা মেলে অসংখ্য গাড়ল পালের দৃশ্য। মূলত ভেড়া পালন শুরু হয় ২০০২ সালের শুরুর দিকে। তখন দেশীয় ভেড়া পালন করা হতো। ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে তারানগার গ্রামের দবির উদ্দীন ভারত থেকে বড় প্রজাতির দুটি ভেড়া নিয়ে আসেন। দেশীয় নারী ভেড়ার সাথে ওই প্রজাতির পুরুষ ভেড়ার ক্রস করে যে বাচ্চা (গাড়ল) উৎপাদন হয় তাতেই আসে বড় সফলতা। তখন এ কাজে উৎসাহ বেড়ে যায় দবির উদ্দীনের। স্বল্প সময়ের মধ্যেই দবির উদ্দীনের বাড়ি একটি খামারে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে বিভিন্ন গ্রামে গাড়ল পালন শুরু হয়।
তারানগর গ্রামের গাড়ল পালনকারী আরোজুল্লাহ বলেন, গাড়ল জাতের ভেড়া বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়। প্রতিবারে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা প্রসব করে মা গাড়ল। দেশীয় ভেড়ার চেয়ে গাড়ল আকারে প্রায় দ্বিগুণ। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি গাড়ল থেকে ৩৫-৫০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। দামও বেশি এবং খেতে সুস্বাদু। খাবার, আবাস ও পালন পদ্ধতি দেশীয় ভেড়ার মতই। দবির উদ্দীনের এই সাফল্যে মুজিবনগর এলাকায় এখন গাড়ল জাতের ভেড়া পালন হচ্ছে প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। জেলার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার মানুষ মুজিবনগর থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন গাড়ল ভেড়ার বাচ্চা। প্রতিটি বাচ্চা ৩ থেকে ৫ হাজার এবং প্রাপ্তবয়স্ক ১০ হাজার থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
মুজিবনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসেবে মতে, এখানে শতাধিক খামারে গাড়ল রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। দবির উদ্দীনের খামারে বর্তমানে আড়াইশ গাড়ল রয়েছে। স্বল্প জায়গা এবং অল্প খরচে গাড়ল পালন করে অনেকই জমি ও গাড়ি-বাড়ি করেছেন। সংসারে সচ্ছলতা এসেছে খামারিদের। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় নানাভাবে গাড়ল পালনে সহায়তা ও উৎসাহিত করছে খামারিদের।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম বারতা২৪.কম-কে বলেন, দেশে ভেড়ার উন্নত জাত তৈরির বিষয়ে কোনো গবেষণা কিংবা প্রকল্প নেই। তাই চাষিদের এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সারা দেশে গাড়ল জাত ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। পাশাপাশি জাত উন্নয়ন ও পালন বিষয়ে আগ্রহী খামারি কিংবা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ জাত সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনীতিতে আরও সুবাতাস বয়ে যাবে।