ধুলায় ধূসর যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক

যশোর, দেশের খবর

জাহিদ হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, যশোর | 2023-08-22 00:22:40

দুটি প্যাকেজে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে প্রায় ৪ বছর ধরে। নির্মাণ কাজের ফলে সংলগ্ন এলাকায় উড়ছে ধুলা। ধুলায় ধুসর হয়ে গেছে ৩৮ কিলোমিটার সড়ক সংলগ্ন এলাকা।

নিয়মিত পানি না ছিটানো, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ও যেখানে-সেখানে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় বায়ুদূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ধুলা ও বায়ুদূষণের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে স্বীকার করেছেন চিকিৎসকরা।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩৮ কিলোমিটারের এ মহাসড়কটির পুনর্নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৮ কোটি ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে সড়ক বিভাগ।

চলছে মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ/ছবি: বার্তা২৪.কম 

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, সড়কের ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে যশোর পুলেরহাট থেকে বেনাপোল পর্যন্ত সড়কে ১৫ কিলোমিটার রাস্তার পিচ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাস্তা জুড়ে পাথরের টুকরো ও বালুকণা থাকায় বিশেষ করে মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহনগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। এতে করে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।

যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও বালুবাহী ট্রাক ও ভারী যানবাহনগুলো চলাচলের কারণে পুরো সড়ক জুড়ে কুয়াশার মতো ধুলা উড়তে দেখা গেছে। এ দৃশ্য দেখে মনে হয় রৌদ্রজ্জ্বল দুপুরেও যেন কুয়াশার শীতের সকাল। অতিরিক্ত ধূলার কারণে ওই রাস্তায় অটোরিকশা, মোটরসাইকেল যাত্রীসহ পথচারীরা দুর্ভোগের পাশাপাশি তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

রাস্তা খনন করে রাখা হয়েছে/ ছবি:বার্তা২৪.কম

এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের মতো করে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তদারকির অভাবে কাজের এমন ধীরগতি। তাদের স্বেচ্ছাচারী ভূমিকার কারণে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

পুলেরহাট এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, রাস্তার কাজ চলছে, কিছুটা ধুলা-বালি উড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি রাস্তায় নিয়মিত পানি দিয়ে রাখেন তাহলে অতিরিক্ত ধূলা-বালি থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেত। গত দুইদিনে রাস্তার ধুলা-বালি জনজীবন আরও অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

ঝিকরগাছা বাজারে সড়ক সংলগ্ন ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন জানান, শুধু রাস্তার কারণে মারাত্মক বায়ু দূষণের শিকার আমরা। এমন ধুলা আগে ছিল না। ধুলা থেকে রাতেও নিস্তার নেই। রাস্তার গাড়ি চললেই ধুলা ছিটে এসে দোকানের খাবারে মিশে যায়।

চলছে মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ/ ছবি:বার্তা২৪.কম

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইমদাদুল হক বার্তা২৪.কম-কে জানান, দুটি প্যাকেজে ২০১৬ সাল থেকে রাস্তার পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি প্যাকেজে শতকরা ৭৫ ভাগ এবং অন্য প্যাকেজে ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ধুলা-বালি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাস্তায় প্রয়োজন মতো পানি দেওয়া হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমের কারণে পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। তবে রাস্তায় সার্বক্ষণিক পানি দেওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বার্তা২৪.কম-কে জানান, ৩৮ দশমিক ২ কিলোমিটার মহাসড়কটি দুটি প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত। প্রথম প্যাকেজে ২০ কিলোমিটার ও দ্বিতীয় প্যাকেজে ১৮ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ কাজ হচ্ছে।

ধুলায় ধূসর মহাসড়ক/ছবি: বার্তা২৪.কম

তিনি আরও বলেন, শুকনো মৌসুমে যশোর-বেনাপোল সড়কের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ধুলা মুক্ত করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিনে দুইবার করে ৫টি বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে পানি ছিটানো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ তারপরও যদি পানি না ছিটায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ধুলার মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ নানা সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে যশোরবাসী। রাস্তায় চলাচল করার সময় ফেস মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর