বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিনের নিকটে মালয়েশিয়াগামী একটি ট্রলার ডুবিতে ১৫ জনের প্রাণহানির ঘটনায় ১৯ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে টেকনাফ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন টেকনাফ কোস্টগার্ডের কন্টিজেন্ট কমান্ডার এস এম ইসলাম।
টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীয়া পাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আলমকে (২৮) প্রধান করে ১৯ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে মামলা করেন কোস্টগার্ডের কন্টিজেন্ট।
বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, সাগরে মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় কোস্টগার্ড বাদি হয়ে একটি মামলা রুজু করেছে। এই মামলার ৮ জন আসামিকে আটক করে কক্সবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধারকৃত মৃত দেহগুলো ময়না তদন্ত শেষে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া উদ্ধার ভিকটিমদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মানব পাচার রোধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। মানব পাচারে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। তবে মানব পাচার ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রচারণা চালানো হবে এবং পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ মাঠে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
আটক পাচারকারীরা হলেন, টেকনাফ নোয়াখালী পাড়ার ট্রলার মাঝি ফয়েজ আহম্মদ (৪৮) একই এলাকার হুমায়ুন কবির (২০), মোহাম্মদ আজিজ (৩০), মোহাম্মদ করিম (৪৯), সৈয়দ আলম (২৭), জুম্মা পাড়ার সাদ্দাম হোসেন (২০), মো. রফিক (২৬) ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ওসমান (১৭)।
অপর আসামীরা হলেন, টেকনাফের বাহারছড়া নোয়াখালী পাড়ার মো. আজিজ, ফয়েজ আহাম্মদ, মো. করিম, জুম্মা পাড়ার সাদ্দাম হোসেন, মো. রফিক, আব্দুস সালাম, সাইফুল ইসলাম, কোনার পাড়ার মো. হোছন, কচছপিয়ার মো. আয়ুব, জাফর আলম, আব্দুর রহিম, বাঘগোনার নুরুল ইসলাম, ফ্রিস ভাঙ্গার সৈয়দুল হক, টেকনাফ সদরের মিঠাপানির ছড়ার ইউনুচ ওরফে ইউনুচ মাঝি, হাবির ছড়ার মো. সালাম, রাজার ছড়ার হুমায়ুন কবির, উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ডি/৬৪ ব্লকের মো. ওসমান, সাবরাং পানছড়ি পাড়ার আব্দুল গফুর ওরফে ইসমাইল।
পুলিশ সূত্রে জানায়, সাগরপথে মালয়েশিয়াগামী যাত্রীবাহি একটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি পাথরের ধাক্কায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ৭২ জন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
এদিকে কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. সোহেল রানা বলেন, বুধবার সকালে বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় মো. আব্দুল্লাহ নামক এক যুবককে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর আগে ১৫ জন মৃত এবং ৭২ জনকে জীবিত করা হয়েছিল। জাহাজ, হেলিকপ্টার, স্পীড বোট ও ট্রলার নিয়ে নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।
প্রসঙ্গত, ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে টেকনাফের নোয়াখালীয়া পাড়ার উপকূল দিয়ে অবৈধ ভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি এলাকায় পাথরে ধাক্কা লেগে পানিতে ডুবে যায় ১৩৮ জন বহনকারী একটি ট্রলার। এসময় ট্রলার যাত্রী আব্দুল ৯৯৯ নম্বরে কল করে বাঁচার আকুতি জানানোর পর কোস্ট গার্ড উদ্ধার অভিযানে যায়। এতে বুধবার বিকেল পর্যন্ত মৃত এবং জীবিত ৮৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বাকি অর্ধশত এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।