বাঁশের তৈরি পণ্য বাঙালির পুরোনো ঐতিহ্য। পুরোনো এই ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু পূর্ব পুরুষের এই পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চিকনী গ্রামের একটি পরিবার। পূর্ব পুরুষদের এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে তারা এখানো তৈরি করছেন ঝুড়ি, ডালা, কুলা, চালুনি, খলুই, হাতপাখাসহ নানা পণ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিভৃত পল্লী অঞ্চল চিকনী গ্রামের একই পরিবারের ইমরুল হাসান আলী, হামিদা বেগম, ইউনুছ আলীসহ আরও অনেকে বাঁশের পণ্যসামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় নানা রকমের বাঁশের তৈরি পণ্য।
এ সময় তাদের সঙ্গে কথা হলে জানায়, অতীতে গ্রামে–গঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্যসামগ্রীর কদর ছিল অনেক । এসব পণ্য শোভা পেত প্রত্যেক বাড়িতে। এছাড়া গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার দ্রব্যাদি, ডালা, চালুন, ডুলি, খরপা, চাটাইসহ অসংখ্য জিনিস আজও তৈরি করে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তবে ইদানিং প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন তা হারিয়ে যেতে বসেছে।
বর্তমানে এ ব্যবসায় মন্দাভাব থাকায় বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এই পরিবারটির চলছে দুর্দিন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও দৃঢ় মনোবল নিয়ে বাঁশের পণ্য তৈরি ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন ইউনুস আলীর ৭ সদস্যের পরিবারটি।
পরিবারটির সদস্য ইমরুল হাসান আলী বলেন, এসব জিনিসপত্র তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ । বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ সংগ্রহ করার পর তা দা-ছুড়ি দিয়ে তা চিরানো হয়। পরে বাঁশগুলো পণ্যের মানভেদে চিকন আকারের শলা বা বাতি তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। এরপর বানানো হয়ে থাকে নানা দ্রব্যসামগ্রী। এ কাজটি তার বাপ-দাদার আমল থেকে করে আসছেন। তবে পুঁজি থাকলে এই পেশায় স্বাবলম্বী হওয়া যেতে পারে।
আরেক সদস্য হামিদা বেগম বার্তা২৪.কম-কে জানান, তার পরিবারের সবাই এই কাজের সঙ্গে জড়িত। বাঁশের তৈরি করা পণ্যসামগ্রীগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারিতে ও স্থানীয় হাট-বাজারে খুচরা বিক্রি করা হয়। যা বিক্রি করে প্রতি মাসে খরচ বাদে লাভ হয় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, সরকারি ও বে-সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিকভাবে সহায়তা পেলে বাঁশ শিল্পের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মণ্ডল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এটি একটি লাভজনক পেশা। বাঁশ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।