ফুলের ঘ্রাণে ঘুম কেড়ে নেয়ার মতোই একটি গ্রাম সাবদি। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নে এর অবস্থান। ছোট্ট এই গ্রামটি এখন ‘ফুলের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। এ রাজ্যে রয়েছেন চার শতাধিক ফুল চাষি। এ গ্রামের আশপাশের সব জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় হরেক রকমের ফুলের বাগান।
সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন রঙের গাঁদা, চেরি, চন্দ্রমল্লিকা, জবা, সূর্যমূখী, গ্যালেরিয়া, ডালিয়া, স্টার, মাম, কাঠমালতি, বেলি, ঝাড়বাড়া ও জিপসিসহ অন্তত চল্লিশ প্রকারের দেশি বিদেশি হরেক রকমের ফুল চাষ হচ্ছে এখানে। তাজা ফুলের সুবাস নিতে ও মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত দর্শনার্থী ভিড় করছেন এখানে।
এ গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে ফুলের ক্ষেত। ফুলই এখানে ফসল। শত শত বিঘা জমিতে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজি জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ।
ফুলের চাষাবাদ করে এ এলাকার লোকজন তাদের ভাগ্যের চাকার পরিবর্তন করেছেন। তারা ফুল উৎপাদন, ফুলের মালা তৈরি ও ফুল বিক্রিতে সরাসরি জড়িত আছেন। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ফুল রাজধানীর শাহবাগ, চট্টগ্রাম ও মুন্সিগঞ্জের ফুলের আড়তে যায়।
প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন মোহাম্মদ আলমগীর। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, ফুল চাষ এখানকার মানুষের দিন বদলে দিয়েছে। যাদের নুন আনতে পানতা ফুরাতো। তারা এখন স্বচ্ছল। এই গ্রামের দেখাদেখি এখন আশেপাশের অনেক গ্রামেই ফুল চাষ হচ্ছে।
ফুল চাষি মোতালেব বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত এক দশক ধরে সাবাদি ছাড়াও দিঘলদী, সেলশারদী, মাধবপাশা, আইছতলাসহ সোনারগাঁও উপজেলার সম্ভুপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। এই অঞ্চলের হতদরিদ্র কৃষকেরা ফুল চাষে স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছেন। এখানকার ফুল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চাহিদা পূরণ করে থাকে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখানকার কৃষকেরা ফুল চাষে দিন দিন আরো আগ্রহী হয়ে উঠছে। তবে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে তেমন কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় না। কিভাবে ফলন ভালো হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে মাঠ পর্যায়ে কোনো কৃষি কর্মকর্তাকেও দেখা যায় না। কৃষি ঋণতো আরও ঝামেলার। কৃষি ঋণের ব্যাপারেও ফুলচাষিরা বরাবরই পিছিয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, নারায়ণগঞ্জের ফুল চাষকে আরও প্রসারিত করতে ইতোমধ্যে নানা প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ফুল বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সমস্যার ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা বাগান মালিকদেরকে বলে এসেছি যদি আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা করবো। উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের ঋণ কমিটিতে তাদের বিষয়টি উপস্থাপন করে সহজ শর্তে বাগান মালিকদের ঋণ প্রদানের ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।