সেচ সংকটের কারণে যশোর অঞ্চলের উঁচু জমিতে কৃষকদের ধানের আবাদ করা ছিলো কষ্টসাধ্য। আবাদ করলেও খরচের টাকা তুলতে না পারায় বছরের পর বছর জমি ফেলে রাখতেন কৃষকরা। এখন এসব জমিতেই বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ করে সচ্ছলতা ফিরতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। অন্যান্য ফসলের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং আশানুরূপ দাম পাওয়ায় তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে যশোর সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতগুলোতে সাদা তুলায় ভরে গেছে। মাঘের শীতের মিষ্টি রোদে কৃষকরা ক্ষেতে তুলা তুলতে ব্যস্ত।
জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া তুলা চাষের জন্য উপযোগী। যশোর জেলার আট উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সিবি-১২ ও ১৪ উচ্চ ফলশীল, সিবি-১ হাইব্রিড এবং রূপালী-১ ও ডিএম-৩ হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ হয়েছে। যা গত মৌসুমে চাষ হয়েছিলো ২ হাজার ৪১১ হেক্টর জমিতে।
সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের কৃষক আমজেদ হোসেন জানান, উঁচু জমি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচ আর স্বল্প পরিশ্রমে এই ফসল উৎপাদন করা যায়। তুলার বীজ থেকে তৈল ও খৈল পাওয়া যায়। চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি তুলা উৎপাদন খরচ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। বিঘাতে তুলা উৎপাদন হয় ১৫ থেকে ১৮ মণ। বর্তমানে প্রতিমণ তুলার মূল্য ২৩ শ’ টাকা। তুলা বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা নাই। কৃষি কর্মকর্তদের ফোন দিলে তারা নগদ টাকা দিয়ে তুলা নিয়ে যায়।
একই এলাকার তুলা চাষি ইদ্রিস আলী জানান, এবার তার ২ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তুলা বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় করবেন বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, উৎপাদিত তুলা বিক্রি করতে কৃষককে কোনো বেগ পেতে হয় না। চাষ থেকে বিপণন পর্যন্ত তাদেরকে সকল কাজে সহযোগিতা করছে জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্তকর্তাগণ। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন তুলার বীজ বপনের আগে কৃষি কর্মকর্তা সময় মতো এবং ভালো বীজ সরবরাহ করতো তাহলে তুলা উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেত।
জেলা প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কুতুব উদ্দীন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের দেশে তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যশোর অঞ্চলে উঁচু জমির পরিমাণ বেশি হওয়ায় তুলা চাষ বৃদ্ধি করার লক্ষে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। চাষিদের প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ ও মাঠ দিবসের মাধ্যমে তুলা চাষে আগ্রহ বাড়নো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তুলা অন্য ফসলের চেয়ে এগিয়ে এই জন্য, তুলা গাছে পাতা অনেক বড় এবং বৃক্ষ সুলভ হওয়ায় অনেক কার্বন শোষণ করে। এটা পরিবেশের জন্য উপকার। অর্থকরি ফসল হিসাবে কৃষকরা দিন দিন তুলা চাষে লাভবান হচ্ছে।