সাভারের আশুলিয়ায় সৎ মেয়ের হাতে খুন হতে হলো শেলী সুলতানা নামের এক নারীকে। শেলী সুলতানার স্বামী টিপু সুলতান ব্যক্তিগত জীবনে ৩টি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
দ্বিতীয় বউ মীনার সঙ্গে অনেক আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন টিপু সুলতান। সেই বইয়ের সন্তান সানজিদা যখন অনেক ছোট ঠিক তখনই তার মা ও তার কোনো খোঁজ-খবর নেওয়া থেকে বিরত থাকেন বাবা টিপু সুলতান। ছোটবেলা থেকেই তিনি তার মায়ের সঙ্গে শেরপুরের নকলা থানার শাইলামপুরে থেকে লেখাপড়া করতেন।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা জানান, সানজিদা ও তার মাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয় তার। তার দুই সৎ মাকেই আশুলিয়া ও কুষ্টিয়ায় বাড়ি করে দিয়েছেন। এদিকে সানজিদা ও তার মাকে কিছুই দেননি টিপু সুলতান। মূলত এই ক্ষোভ থেকেই সানজিদা তার সৎ মা শেলী সুলতানাকে তার সঙ্গী নিয়ে হত্যা করতে পারে।
স্থানীয়রা বার্তা২৪.কম-কে জানান, টিপু সুলতান অনেক ভালো প্রকৃতির মানুষ। তবে তিনি ৩টি বিয়ে করেছিলেন। টিপু সুলতান তার বড় বউ শেলী সুলতানাকে আশুলিয়ার দক্ষিণ বাইপাইলের চারালপাড়া এলাকায় একটি বাড়ি করে দেন। পাশাপাশি ছোট বউকে পার্শ্ববর্তী সোনিয়া মার্কেটের একটি ভাড়া বাসায় রেখে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। তার ছোট বউকে কুষ্টিয়া বাড়ি করে দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। সেই বাড়ির কাজ দেখতে ছোট বউকে নিয়ে টিপু সুলতান ঘটনার আগের দিন কুষ্টিয়া যান।
প্রতিবেশীরা জানান, টিপু সুলতান তার মেয়ে সানজিদা ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ না রেখে দুই বউকে বাড়ি করে দিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতেন। কিন্তু সানজিদার জন্য কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেনি টিপু সুলতান। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে সানজিদা ও তার সঙ্গীকে নিয়ে গতকাল রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার দক্ষিণ বাইপাইলের চারালপাড়া এলাকায় তার বড় সৎ মায়ের বাড়িতে আসেন।
বাড়িতে ঢুকেই বাড়ির সব ইলেক্ট্রনিক বাতি বন্ধ করে দেন। এ সময় শেলী সুলতানা বাতি বন্ধ করার কারণ জানতে চাইতেই বাড়ির ভেতরে সানজিদার সঙ্গী চলে আসে। পরে শেলী সুলতানাকে ছুড়িকাঘাত করে ও পরে গলা টিপে হত্যা করে পালানোর চেষ্টা করে তারা। এসময় শেলী সুলতানার ছেলে সবুজ ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরেন। তার মায়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে সে চিৎকার করলে এলাকাবাসী সানজিদাকে আটক করে।
এ সময় সানজিদার সঙ্গী পালিয়ে যায়। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ রাত পৌনে ১২টার দিকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিহতের স্বামী টিপু সুলতান সানজিদাকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাত আরও একজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে ওই মামলায় সানজিদাকে গ্রেফতার দেখিয়ে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। তবে এ ব্যাপারে টিপু সুলতানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক নুরুল হুদা ভুইয়া জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আটক সানজিদাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।