সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় কয়েকটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে। এখানে নেই কোন মেডিকেল অফিসার কিংবা দক্ষ নার্স। বাণিজ্যিকভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছেন রোগীদের সাথে প্রতারণার মধ্য দিয়ে। স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি অবগত হলেও অদৃশ্য কারণে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের নমনীয়তায় রোগী ও স্বজনদের পাশাপাশি চিকিত্সকদের মাঝেও ক্ষোভ বাড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মেডিকেল অফিসার বলেন, বর্তমানে সময়ে বিএমডিসি সনদপ্রাপ্ত অনেক চিকিৎসক শুধুমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা দান করছেন। সরকারি হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত আরো অনেকে খণ্ডকালীন সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা দিয়ে থাকেন। ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা নিশ্চিত করা গেলে চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্র নিরাপদ হবে। রোগীরা পাবেন উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা।
গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বাজার হিসেবে পরিচিত। এ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে প্রতিনিয়ত বামন্দী বাজারে যাওয়া আসা করে। এ সুযোগ লুফে নিতে অনেকটাই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বামন্দী বাজারে এক ডজনের উপরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার নামে ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি রয়েছে জনমনে। এর মধ্যে মাহি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, করবী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং আল ফালাহ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেডিকেল অফিসার নেই। ক্লিনিকের কাগজপত্রে মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেখানো হলেও কার্যত তাদের কোন অস্তিত্ব নেই এসব প্রতিষ্ঠানে।
ভুক্তভোগী কযেকজন রোগীর স্বজন জানান, বামন্দীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে কিছু ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভাড়া করা মেডিকেল অফিসার নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত করিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শন পার করেন প্রতিষ্ঠান মালিকরা। বিষযটি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অবগত হলেও রহস্যজনক কারণে নিরবতা পালন করেন। তাছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত তদারকি না থাকায় রোগীদের সাথে প্রতারণা করেও পার পেয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও সনদপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ছাড়াই আলট্রাসনোগ্রাফিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থ।
জানতে চাইলে করবী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বিদ্যুত বলেন, দু’জন মেডিকেল অফিসার সপ্তাহে দুইদিন করে রোগী দেখেন। স্থায়ী মেডিকেল অফিসার দ্রুত নিয়োগ দেয়া হবে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন করে মেডিকেল অফিসার যিনি আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দক্ষ নার্স ও অন্যান্য জনবল থাকতে হবে নিয়মানুযায়ী। ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা ও চেকআপ করাতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খণ্ডকালীন সময়ে কয়েকজন চিকিৎসক এখানকার ক্লিনিকে অপারেশন করে থাকেন। সিজারিয়ান অপারেশন, এপেনডিক্সসহ বিভিন্ন প্রকার অপারেশন করা হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত না করেই। অপারেশন পরবর্তী চিকিত্সার জন্য কোন মেডিকেল অফিসার নেই। ক্লিনিকের বয়, নার্স আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ক্লিনিক মালিক নিজেই চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন।
কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজন জানান, এসব ক্লিনিকের রয়েছে পোষ্য লোক। যারা গর্ভবর্তী মায়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানা প্রলোভনে ক্লিনিকে ভর্তি করায়। অপারেশন হওয়ার পর নানা অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হলেও রোগী ও স্বজনদের আর কিছুই করার থাকে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাঃ নাসির উদ্দীন বলেন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের সাথে আমরা আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যে নীতিমালা ও শর্ত পূরণ না করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।