মহান স্বাধীনতার স্থপতি ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বে লাল-সবুজের পতকাধারী স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি।
১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গ্রামে মহান মানুষটির পায়ের ধূলি পড়ে। এর ৪৮ বছর পার হলেও আজও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে হেলিকপ্টারে করে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান চর পোড়াগাছায় আসেন। এরপর সংক্ষিপ্ত ভাষণ শেষে কোদাল নিয়ে নিজ হাতে মাটি কেটে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর হাতে শুরু হওয়া সেই রাস্তাটি এখন রামগতি-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর হেলিকপ্টার থেকে নামার সময় বঙ্গবন্ধুর পা যেখানে প্রথম পড়েছিল, সেই স্থানটি 'শেখের কিল্লা' নামে পরিচিত। রামগতিতে বঙ্গবন্ধুর আগমনের ৪৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শেখের কিল্লা মাইলস্টোন পাদদেশে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিল্লার পাশে পরে গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম গুচ্ছগ্রাম। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত শেখের কিল্লা স্থানটি পরিদর্শন করেন। তখন সর্বসম্মতিক্রমে জাতির পিতার স্মৃতি রক্ষায় সেখানে শেখের কিল্লার পরিবর্তে বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর পদধূলি পড়ার সঠিক স্থানটি চিহ্নিত করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্মৃতি স্তম্ভ’ নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো কাজ শুরু হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, গুরুত্বপূর্ণ স্থানটির ইতিহাস তুলে ধরতে বেসরকারি সংস্থা ‘ডর্প’র উদ্যোগে কয়েক বছর আগে ‘শেখের কিল্লা মাইলস্টোন’ স্থাপন করা হয়েছে। এটি স্থানীয় ও দেশি-বিদেশি পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
চর পোড়াগাছায় বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেদিনের বক্তব্য শুনেছেন ডর্প'র প্রতিষ্ঠাতা এএইচএম নোমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেদিন ‘দেশ গড়ার ডাক’ দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিল্লার স্থানে দাঁড়িয়ে গগণবিদারী কণ্ঠে বলেছিলেন, দেশ আমাদেরকেই গড়তে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে, প্রত্যেক বাড়িতে একটি করে গাছ হলেও লাগাতে হবে। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে দেশ গড়া ও অর্থনৈতিক মুক্তি আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।
এএইচএম নোমান আরও বলেন, কিল্লার স্থানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ, পর্যটক রেস্ট হাউজ, স্থানীয় সংস্কৃতি, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইতিহাসসহ পাঠাগার সম্বলিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্বপ্ন কমপ্লেক্স’ স্থাপন অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে স্থানটির গুরুত্ব বাড়বে এবং মেঘনার নদীসহ একটি পর্যটন এলাকা গড়ে উঠবে।
স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্মৃতি ইতিহাস রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মো. মোমিন উল্যাহ জানান, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষা করলে এলাকার উন্নয়ন হবে। সঠিক স্থানে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের জন্য আমরা সরকারের কাছে জোড় দাবি জানাই।