“মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা” ২১ ফেব্রুয়ারি- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এমন সুর বেজে উঠে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বাংলা ভাষাভাষীদের প্রাণে প্রাণে। কিন্তু এ সুর বাজাতে গিয়ে হতাশায় পড়ে মৌলভীবাজার জেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কারণ, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শহীদ মিনার।
বছরের পর বছর বাঁশ, সুতা আর কলা গাছ দিয়ে তৈরি শহীদ মিনারই তাদের একমাত্র ভরসা। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি এলে এসব প্রতিষ্ঠানে বাঁশ ও কলা গাছের অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শিক্ষার্থীরা শহীদ দিবস পালন করে।
পাঠ্যবইতে ভাষা শহীদদের ইতিহাস পড়ে-বুঝলেও বাস্তবে তাদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা ও শ্রদ্ধা জানাতে এখনো পারেনি এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাই তাদের আক্ষেপ, কলা গাছের মিনার আর কতকাল? কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারিভাবে নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১ হাজার ৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৬৬টিতেই শহীদ মিনার নেই। এ ছাড়া মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর অধিকাংশেই নেই কোনো শহীদ মিনার।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এ ওয়াদুদ বলেন, জেলার ২০ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। তবে এগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করার চেষ্টা চলছে।
২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ডলুছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনারটি ওই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তুষফল দেব বর্মা, মিজান মিয়া, রাজন দেব বর্মা, রাজন মিয়ার উদ্যোগে ছাত্র ছাত্রীরা তৈরি করেছে। বৃহস্পতিবার(২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এই শহীদ মিনার তৈরির কাজ তারা সম্পন্ন করেছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি শ্যামল দেব বর্মা বলেন, এ বছরই প্রথম বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা উদ্যোগ নিয়ে কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করেছে। সরকার যদি স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে দেয় তাহলে তারা জাতীয় দিবসগুলোতে যথাযথভাবে সম্মান জানাতে পারবে।
প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র দত্ত জানান, স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার না থাকায় তারা এ পথ বেছে নিয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জাকিরুল ইসলাম জানান, শুধু এ বিদ্যালয় নয় এ উপজেলার ১৩৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৭টি বিদ্যালয়ে স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার নেই। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতা নিয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, শুধু শ্রীমঙ্গল উপজেলায় নয়, জেলার মোট ৬৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এসব দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফুল দিতে যেতে হয় দূরের কোনো শহীদ মিনারে।
যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই এর একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগির শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।