রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পতিতাপল্লির আরেক যৌনকর্মী রিনা বেগমকে (৬৫) ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী জানাজা ও দাফন করা হয়েছে। তবে এবার তার জানাজার নামাজের ইমামতি করেছেন গোয়ালন্দ ঘাট থানা জামে মসজিদের ইমাম মো. আবু বক্কার সিদ্দিকি।
এর আগে যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজার নামাজের ইমামতি করেছিলেন মাওলানা গোলাম মোস্তফা। সেই জানাজার নামাজ পড়ানোর পর সামাজিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তারপর থেকে তিনি আর কোন যৌনকর্মীর জানাজা পড়াবেন না বলে ঘোষণা দেন।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লি সংলগ্ন কবরস্থান মাঠে রিনা বেগমের জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে দৌলতদিয়া যৌনপল্লির জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে তার দাফন করা হয়।
জানাজায় অংশ নেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসক ও অপরাধ) মো. সালাউদ্দীন শেখ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স) মো. ফজলুর করিম, গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমানসহ গোয়ালন্দ উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক মুসল্লি।
জানাজায় অংশগ্রহণ শেষে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান স্যার দৌলতদিয়া যৌনপল্লির খেটে খাওয়া মানুষের মানবিক দিকগুলো গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেগ জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তারই প্রেক্ষিতে আজ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এই যৌনকর্মীর দাফন হয়েছে। আগামীতেও এই রীতি মেনে জানাজা ও দাফনের কাজ অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীদের মৃত্যুর পর তাদের নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। তাদের কবর দেওয়ার মতো কোন জায়গাও ছিল না। তাছাড়া কোন ইমামও জানাজার নামাজ পড়াতে চাইতেন না। কিন্তু ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নির্দেশে ২ ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান ধর্মীয় রীতি মেনে হামিদা বেগম নামে এক যৌনকর্মীর জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করেন।
ওই যৌনকর্মীর জানাজার নামাজে ইমামতি করায় মাওলানা গোলাম মোস্তফা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হন। সামাজিক ভাবেও তিনি নিগৃহীত হন। এরপর তিনি ঘোষণা দেন আর কোন যৌনকর্মীর জানাজার নামাজ পড়াবেন না।