রংপুরের পীরাগাছায় রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে কেঁচো সারের (ভার্মি কম্পোস্ট) দিকে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে। কেঁচো সার ব্যবহারে কৃষকদের ইতিবাচক সাড়া মিলছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের ফকিড়া বড়দরগা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের ফজলু মণ্ডল স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। বর্তমানে আশেপাশের কৃষকরা ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। বিকল্প হিসেবে কেঁচো সার ব্যবহার করছেন।
ফজলু মণ্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতিকেজি ভার্মি কম্পোস্ট ৮-১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতি মাসে ১২-১৪ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। আবর্জনা, গোবর ও কচুরিপানা মিশিয়ে বস্তায় ভরে ১০ থেকে ১৫ দিন রাখা হয়। পরে বস্তা থেকে বের করে সিমেন্টের রিং স্লাবে রেখে সেখানে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবেই কয়েক দিন পর ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি হয়ে যায়।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও উপজেলার কৃষকরা ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাসায়নিক সার ছেড়ে কেঁচো সারের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন তারা। কেঁচো সার ব্যবহারে সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। কেঁচো সার মাটির জৈবশক্তি বৃদ্ধি করে। ফসলে পানি সেচ কম লাগে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফসল উৎপাদনে কৃষকের চাষ খরচ অনেক কম হয়। ফসলের ফলন বৃদ্ধিসহ পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।
বাজারে কেঁচো সারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উৎপাদনে নেমেছে। এ ক্ষেত্রে নারীরাও পিছিয়ে নেই। কৃষকরা কেঁচো সার দিয়ে ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। রাসায়নিক সার ছাড়াই ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ ও টমেটোসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন কৃষকরা।
কৃষক মতিয়ার রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কেঁচো সার ব্যবহারে আগের তুলনায় ফলন বৃদ্ধি হয়েছে। রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হচ্ছে।’
উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। কেঁচো সার মাটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে ও মাটিকে সমৃদ্ধ করে।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা লোকমান আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ভার্মি কম্পোস্ট একটি উৎকৃষ্টমানের জৈব সার যেখানে অন্যান্য কম্পোস্ট সারের তুলনায় প্রায় ৭-১০ ভাগ পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে। এর প্রস্তুত প্রণালীও তুলনামূলক সহজ। এই কম্পোস্ট ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, গুনগত মান বাড়ায় এবং গুদামজাত শস্যের সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।’
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাণিজ্যিক ভাবে কেঁচো সার উৎপাদনে উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে কেঁচো সার উপজেলায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বর্তমানে রাসায়নিক সারের ব্যবহার আগের তুলনায় কমেছে।