বগুড়ায় রেটিনা ও ফোকাস কোচিং সেন্টারের অন্তরালে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন বা ছাত্র শিবির। কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেয়ার নামে শিবির নেতারা সেখান থেকেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
কয়েকদিন আগে রেটিনা কোচিং সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ছাত্র শিবিরের ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের পর নজরদারিতে রাখা হয়েছে রেটিনা ও ফোকাস কোচিং সেন্টার দুটিকে। এই দুই কোচিং সেন্টারই ইসলামী ছাত্র শিবির কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে।
বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় আলতাফুন্নেচ্ছা খেলার মাঠ সংলগ্ন রেটিনা ও ফোকাস কোচিং সেন্টারের অফিস। কিন্তু এই দুই কোচিং সেন্টারের ক্লাস চলে শহরের রিয়াজকাজী লেনে চারদিকে উঁচু দেয়াল ঘেরা ৬ তলা একটি ভবনে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রেটিনা কোচিং সেন্টারে গোপন বৈঠকের সময় ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর পুলিশ শিবিরের ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্র শিবিরের কর্মপরিকল্পনা, সরকার বিরোধী লিফলেট ও তাদের সাংগঠনিক বই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতা গোপনে বগুড়ায় আসেন। তিনি বগুড়া,জয়পুরহাট,সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। জামায়াত-শিবিরের বাছাই করা কিছু নেতাদের সাথে বৈঠক করেন ওই নেতা। বৈঠকে তিনি বেশ কিছু সাংগঠনিক দিক নির্দেশনা দেন।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-শিবিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে র্যালি করে ছাত্র শিবির। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগের দিন ছাত্র শিবিরের জেলা, থানা ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ কমিটি পুনঃগঠন করা হয়। নতুন কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে রেটিনা ও ফোকাস কোচিং সেন্টার থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
পুলিশের বিশেষ শাখার অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবিরের নেতারা প্রতি মাসে রেটিনা কোচিং সেন্টারে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। সেখান থেকেই তারা সরকার বিরোধী প্রচার প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ এবং নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে আসছে। এর আগেও একাধিক বার রেটিনা কোচিংয়ে গোপন বৈঠক থেকে পুলিশ ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছিল।
বেশ কয়েক বছর জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে না পারায় ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে সরকারি আজিজুল হক কলেজে তাদের কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য চলতি মাসে গঠন করা কমিটি নতুন তৎপরতা শুরু করেছে। রেটিনা কোচিং থেকে উদ্ধার করা ৬ দফা কর্মপরিকল্পনা থেকে বোঝা যায় রেটিনা কোচিং সেন্টারের অন্তরালে শিবিরের কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে থাকে।
তবে রেটিনার পরিচালক ও শিবিরের সাবেক নেতা আবু হুরাইরা এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, কোচিং সেন্টারে শিবিরের কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ নাই। ১৯ ফেব্রুয়ারি রেটিনা থেকে ৯ জনকে গ্রেফতারের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, সেদিন রেটিনা বন্ধ ছিল। তারা কিভাবে রেটিনাতে প্রবেশ করেছে তা জানা নাই।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই কোচিং দুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সেখানে শিবিরের গোপন বৈঠক থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।