লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা দলগ্রাম একরামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি হওয়ার জন্য জোরপূর্বক অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে রেজুলেশন বই ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক অভিভাবক সদস্য আনছারুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মাদরাসাটির (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা দলগ্রাম একরামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভার) মো. নুরুজ্জামান এ অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত অভিভাবক সদস্য আনছারুল ইসলাম উপজেলার দক্ষিণ দলগ্রাম এলাকার মৃত ছানাউদ্দিনের ছেলে।
অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৬ সালে অধ্যক্ষ এমদাদুল হক অবসর গ্রহণ করলে শুরু হয় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান উপাধ্যক্ষ মইনুল হাসান কারিমী। তিনিও ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করলে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
সমর্থন না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক সদস্য আনছারুল ইসলাম নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করে মাদরাসার যাবতীয় কাগজপত্র কুক্ষিগত করেন। এ নিয়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায় মামলা।
পূর্বের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অবসর নেয়ার পরদিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝে নেন মাদরাসাটির সিনিয়র প্রভাষক মো. নুরুজ্জামান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র সদস্য আনছারুল ইসলামের কাছে থাকায় প্রতিষ্ঠানের কোন কাগজপত্র বুঝে নিতে পারেননি। এরই মাঝে গত ৭ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করে নতুন এডহক কমিটি গঠন করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন সাবেক কমিটির সদস্য আনছারুল ইসলাম।
পূর্বের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাগজপত্র বুঝিয়ে দিতে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সভা আহ্বান করেন। সেখানে সাবেক সদস্য আনছারুল ইসলাম দলবল নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের রেজুলেশন বইতে জোরপূর্বক সকলের স্বাক্ষর নিয়ে পুনরায় রেজুলেশন বই নিয়ে চম্পট দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাবেক সদস্য আনছারুল ইসলাম ও তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নুরুজ্জামান।
অভিযুক্ত আনছারুল ইসলাম বলেন, পূর্বের অধ্যক্ষের কিছু অনিয়মের প্রমাণ থাকায় রেজুলেশন বইটি অন্য সদস্যরা আমার কাছে জমা দিয়েছেন। গত শনিবারের সভা শেষে পুনরায় বইটি নিয়ে চলে এসেছি। জোর করে স্বাক্ষর করে নিইনি।
চলবলা দলগ্রাম একরামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভার.) মো. নুরুজ্জামান বলেন, সভায় দলবল নিয়ে আনছারুল প্রবেশ করে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে এডহক কমিটির সভাপতিকে নিয়ে বিদ্রুপ করে চলে যান। জীবন বাঁচাতে সকলেই স্বাক্ষর করেছি। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র পাইনি।
কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাত হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চলবলা দলগ্রাম একরামিয়া ফাজিল মাদরাসার সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভায় আনছারুল নামে একজন রেজুলেশন বইতে জোরপূর্বক সকলের স্বাক্ষর নিয়ে বইটি ছিনিয়ে নেন বলে শুনেছি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে।