ফরিদপুরে কাশ্মীরি কুল চাষ করে নিজের বেকারত্বের দুর্নাম ঘোচালেন মফিজুর রহমান ওরফে মাফি (৩৪)। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে একটি কাশ্মীরি কুলের বাগান করে ৩৫ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। মফিজুরের চোখে মুখে তাই খুশির ঝিলিক।
ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর গ্রামের মো. আক্কাস আলী সরদারের ছেলে মফিজুর। পড়াশোনা বেশি দূর করেননি। নবম শ্রেণি পর্যন্ত। জীবন ও জীবিকার আশায় কুয়েতে পাড়ি জমান। কিন্তু সেখানে মন না বসায় ৭ বছর পর বাড়িতে ফিরে আসেন।
বাড়িতে আসার পর কর্মসংস্থানের জন্য বহু চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু কোনোটাতেই সফল হতে পারেননি। পরে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন।
নিজেদের কিছু পারিবারিক জমি ও বাৎসরিক ভিত্তিতে নেয়া জমিসহ মোট ৭ বিঘা জমিতে গত ৬ মাস আগে কাশ্মীরি কুলের চারা রোপণ করেন মফিজুর। ওই জমিতে ১ হাজার ৮৬০টি চারা রয়েছে। ঝিনাইদহের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ভারত থেকে এই চারা সংগ্রহ করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে হাট গোবিন্দপুর গ্রামে মফিজুরের ‘নাহিদ এগ্রো’ নামে মিশ্র ফলের বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ৭ বিঘা জমির ওই বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় লাল রঙের কুল ঝুলছে। কুলের ভারে ছোট ছোট গাছগুলো নুইয়ে পড়েছে। আবার কোনো কোনো গাছের ডাল কুলের ভারে ভেঙে গেছে।
মফিজুর জানান, গত এক মাস ধরে কুল বিক্রি করছেন তিনি। প্রতি কেজি কুল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, কাশ্মীরি কুলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাঁচা অবস্থায় লাল রঙের থাকে। আর পাকতে শুরু করলে লাল রঙ পাল্টে হলুদ হয়ে যায়। এ কুল খুবই মিষ্টি এবং সুস্বাদু।
প্রথম বছর প্রতিটি গাছে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কেজি কুল ধরেছে। পরবর্তী বছরগুলোতে আবাদ বাড়তে বাড়তে একটি গাছ থেকে ১২০ থেকে ১৩০ কেজি পর্যন্ত কুল হওয়া সম্ভব।
কুল গাছগুলো রোপণ করার পর জৈব্য সার, অল্প পরিমাণ রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। তার প্রত্যাশা এ বছর কুল বিক্রি করে ৩৫ লাখ টাকা আয় হবে।
এদিকে কুলগাছ থেকে কলমও বানাচ্ছেন মফিজুর। প্রতিটি কলম বিক্রি করছেন ৫০ টাকা করে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্ত্তী জানান, ফরিদপুরে প্রথম কাশ্মীরি কুল চাষ করেছেন মফিজুর। কাশ্মীরি কুল চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। বেকার যুবকদের কাছে এটি একটি উদাহরণ হতে পারে।