কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেই চলেছে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনায় জড়িয়ে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক রতন কুমার সাহাও বিদায় নিয়েছেন কলেজ থেকে। এসব অভিযোগে বদলি করা হয়েছে কলেজের হিসাব রক্ষক আবদুল হান্নানকেও। পরিবর্তন এসেছে শিক্ষক পরিষদে। বর্তমানে এসব অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্ত করছে দুদক। এরপরও থেমে নেই অনিয়ম।
বর্তমানে অভিযোগ উঠেছে, কলেজের রসায়ন, পদার্থ ও গণিত বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যবহারিক চূড়ান্ত পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায় করছেন শিক্ষকরা। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে ব্যবহারিক পরীক্ষা বাবদ রসায়ন বিভাগে ৩শ, পদার্থ বিভাগে ৪শ এবং গণিত বিভাগ থেকে ৫২০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর শিক্ষকরা। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের দাবি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস করানো হয়েছে। এসব টাকা ওই ক্লাসের ফি হিসেবে নেয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পদার্থ, ২৫ ফেব্রুয়ারি রসায়ন বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি গণিত বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এসব পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো প্রকার রশিদ ছাড়াই নগদ টাকার মাধ্যমে ব্যবহারিক খাতা জমা নিচ্ছে উক্ত বিভাগগুলো। বিভাগের শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের রসায়ন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকরা ব্যবহারিক বিষয়ে ক্লাস নিয়েছেন, এটা সত্য। তবে এসব ক্লাসের বিনিময়ে আলাদা কোনো ফি নেয়ার নিয়ম নেই।
তাদের দাবি, ব্যবহারিক ক্লাসের ফি, বিভাগের উন্নয়ন ফি সহ নানা খাতের কথা বলে অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষার পূর্বেই বাধ্যতামূলক ফি আদায় করছে বিভাগের শিক্ষকরা। টাকার বিনিময়ে শিক্ষকরা ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর দিয়ে থাকেন। আর টাকা না দিলে ব্যবহারিক পরীক্ষা ও কলেজের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়া হবে বলে তাদের জানানো হয়। এই ভয়ে সবাই টাকা দিতে বাধ্য হয়।
কলেজের বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, অনেক আগ থেকেই রসায়ন বিভাগসহ বিজ্ঞান অনুষদের প্রত্যেকটি বিভাগে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার ভয় দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছেন শিক্ষকরা। নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষকরা এই টাকা পরীক্ষার দিন ভাগবাটোয়ারা করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছেন, টাকা দিতে কোনো শিক্ষার্থী আপত্তি জানালে তাকে পরীক্ষায় প্রাপ্য যথাযথ নম্বর দেয়া হয় না। তাই নম্বর কম পাওয়ার ভয়ে শিক্ষার্থীরা এসব অনিয়মের কথা প্রকাশ করতে ভয় পান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন ভূঁইয়ার মোবাইলে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও কল ধরেননি তিনি।
তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন কলেজের পদার্থ বিভাগের প্রধান বিজয় কৃষ্ণ রায়। তিনি দাবি করেছেন, ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য কলেজ থেকে যে অর্থ ধার্য করা হয়, সেই টাকা দিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে নিতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ৩শ টাকা হারে নেয়া হচ্ছে। তবে যে শিক্ষার্থী ৪শ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছে, সে ভুল অভিযোগ করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, রসায়ন বিভাগের প্রধান সাইফুল ইসলাম দাবি করেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা মোতাবেক টাকা নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে কোনো অতিরিক্ত অর্থ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় না।
আর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গণিত বিভাগের প্রধান মুনির আহম্মেদ। তিনি জানান, ৫২০ টাকা নেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গণিত বিভাগের শিক্ষকদের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করছেন ওই বিভাগের কর্মচারী মো. ওজায়ের। মো. ওজায়ের বলেন, ‘গণিত বিভাগের ব্যবহারিক খাতা জমা দেয়ার সঙ্গে ৫২০ টাকাও জমা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। আর টাকা না দিলে আমি খাতা জমা নিতে পারব না।’