সেক্স ফেরোমন ফাঁদ হচ্ছে এক ধরনের কীটপতঙ্গের দমন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের বক্স ব্যবহার করা হয়। যার দু’পাশে ত্রিকোনাকৃতি ফাঁক থাকে। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করতে স্ত্রী পোকা কর্তৃক নিঃসৃত এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ (স্ত্রী পোকার গন্ধ) ব্যবহার করা হয়, যা সেক্স ফেরোমন নামে পরিচিত।
যশোরে কীটনাশক ব্যবহার না করে এই পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে সবজি। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন যেমন বাড়ছে, তেমনি স্বল্প খরচ হওয়ায় এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী এই অঞ্চলের চাষিরা।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ওই অঞ্চলে এখন ১২ মাসই প্রায় সব রকম সবজির চাষ হয়। তবে এখন মাঠের পর মাঠ চাষ হচ্ছে বাঁধাকপি, লাউ, ফুলকপি, টমেটো, শিম, মুলা, পালংশাক, লালশাকসহ নানা ধরনের সবজি।
জানা গেছে, যশোর জেলার ৮ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। তবে এর মধ্যে প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করা হয়েছে।
শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, টমেটো ও শিম ক্ষেতের মাঝে বাঁশের খুঁটি দিয়ে প্লাস্টিকের পাত্র ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এসব পাত্রের তলায় অল্প পরিমাণ পানিতে মরে আছে কীটপতঙ্গ।
চুড়ামনকাটি এলাকার চাষি আসাদুল ইসলাম ৩ বিঘা জমিতে বেগুন ও ফুলকপি আবাদ করেছেন। এসব জমিতে সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করায় পোকার বালাই নেই। ক্ষেতে শুধুমাত্র সার, পানি দিতে হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে কীটনাশকের মূল্য বেঁচে যাচ্ছে।
রহিম নামে আরেক চাষি জানান, এবার প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত পটল চাষ করছেন তিনি। সেক্স ফেরোমন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন খরচ অনেক কম।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে চাষিরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন। বিষমুক্ত সবজি ক্ষেতগুলো প্রতিদিনই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি ব্যবহারে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, প্রথম দিকে কোনো চাষি বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী ছিলেন না। এরপর বিভিন্নভাবে তাদের উৎসাহ দেয়া হয়। বর্তমানে অনেক চাষি বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী।