চাঁদপুর জেলায় দেড় শতাধিক ডাকঘরের নিজস্ব কোনো ভবন নেই। এসব ডাকঘরের কার্যক্রম চলছে দোকানপাট, সরকারি বিভিন্ন পরিত্যক্ত কক্ষে, নিজস্ব টাকায় ভাড়া করা ঘরে। ফলে স্থানীয় লোকজন ডাকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
চাঁদপুর পোস্ট অফিসের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি চাঁদপুর সদর শাখা ও অন্যটি হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখা। দুইটি কার্যালয় থেকে উপ-শাখাগুলো পরিচালিত হয়। চাঁদপুরের ৯৮টি ও হাজীগঞ্জে ১০১টি ডাকঘর পরিচালিত হয়ে আসছে। যেমন- হাজীগঞ্জ কার্যালয়ের অধীনে হাজীগঞ্জ শাখার মাধ্যমে ১৬টি ডাকঘর, বলাখাল শাখার মাধ্যমে ১৩টি ও কচুয়া শাখার মাধ্যমে ১৩টি ডাকঘর পরিচালিত হয়। ওইসব ডাকঘরগুলো অধিকাংশের নির্দিষ্ট কার্যালয় নেই। পোস্ট মাস্টাররা নিজ বাসভন, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ফেরারী হয়ে, সরকারি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
সরেজমিনে কচুয়া-হাজীগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী রঘুনাথপুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ডাকঘরটি অকেজো হয়ে রয়েছে। তবে সেখানে একজন পোস্টমাস্টার, পোস্টম্যান ও রানার নিযুক্ত আছেন।
রঘুনাথপুর বাজার ডাকঘরে পোস্টম্যান হিসেবে ত্রিশ বছর দায়িত্ব পালন করছেন শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, একটা ইন্টারভিউ কার্ড আসলে খুব কষ্ট পাই। ঠিকমতো পৌঁছাতে পারি না। রঘুনাথপুর বাজারে দ্রুত ডাকঘরের নির্দিষ্ট কার্যালয় হলে এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হবে। এই ডাকঘরে ১৭টি গ্রামের মানুষের চিঠিপত্র, মামলা-মোকাদ্দমার কাগজপত্র আসে।
রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, রঘুনাথপুর বাজারটি খুবই জনবহুল একটি বাজার। এখানে পোস্ট অফিসের অবকাঠামোর উন্নয়ন জরুরি।
রঘুনাথপুর ডাকঘরের অধীনে কচুয়া উপজেলার কাদলা, দেবীপুর, বরৈগাঁও, মুরাদপুর, নোয়ার্দ্দা, তেগুরিয়া, শাশনখোলা, আয়মা, হাজীগঞ্জ উপজেলার তারাপাল্লা, ফিরোজপুর, সাতবাড়িয়া, নিশ্চিন্তপুর, মহব্বতপুর, সিহিরচোঁ গ্রামের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
হাজীগঞ্জ শাখার অধীনে রয়েছে টঙ্গীরপাড়, বলিয়া বাজার, ধড্ডা, পাতানিশ, কালচোঁ, সুহিলপুর, আলীগঞ্জ, উয়ারুক, আহাম্মদপুর, বড়কুল, পালিশারা, কাশিমপুর, সেন্দ্রা, ঘনিয়া, মনতলা, চৌধুরী বাজার প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে ৩নং কালচোঁ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক হোসেন প্রধানীয়া বলেন, ডাকঘরের জন্য স্থায়ী সম্পত্তি না থাকায় ভবন করা যাচ্ছে না। রঘুনাথপুরের ডাকঘরটি ব্রিটিশ আমলের ডাকঘর। এই ডাকঘর পুনরায় সচল করা প্রয়োজন।
গ্রামাঞ্চলের ডাকঘরগুলোতে ঘর না থাকা প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার আবুল বাসার বলেন, ডাকঘরগুলোর নিজস্ব ভবন নেই। রঘুনাথপুরের মতোই জেলার অধিকাংশ ডাকঘরের নিজস্ব কোনো ভবন নেই। ডিজিটাল ডাকঘরের ডিজিটাল কার্যক্রম পরিচালিত করতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন করা খুবই জরুরি।
কচুয়া শাখার পোস্টমাস্টার আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, শাখা ডাকঘরগুলোর কার্যক্রম ও সেবা গ্রহীতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও নিজস্ব ভবন না থাকায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
হাজীগঞ্জ কার্যালয়ের পোস্ট মাস্টার কেফায়েত উল্লাহ ও সহকারী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের নিজস্ব কার্যালয় নেই। নেই চেয়ার-টেবিল। অন্যের দোকানে রাজস্ব, ডাকটিকিট, খাম বিক্রি করছি।
বাংলাদেশ পোস্টাল ইডি কর্মচারী ইউনিয়ন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি এ বিএম হানিফ মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের বেতন বৃদ্ধি ও উৎসব ভাতার দাবির পাশাপাশি গ্রামীণ ডাক ব্যবস্থার উন্নয়নে আন্দোলন করে আসছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের বরাবর ১০ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছি।
জেলা পোস্ট অফিস পরিদর্শক কাঞ্চন সাহা বলেন, পোস্ট অফিসের শাখা অফিসগুলোতে কেউ তিন শতাংশ সম্পত্তি অনুদান দিলেই আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে থাকি। বিষয়টি কুমিল্লা আঞ্চলিক পোস্ট অফিস তদারকি করছে।