শিক্ষক সংকটে ফেনীর পরশুরাম সরকারি ডিগ্রি কলেজে ১৫০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু কাওছার মো. হারেছ জানান, অধ্যক্ষসহ ২২ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র চারজন। ১০ জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে চলছে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম।
তিনি বলেন, এতে করে বিপাকে পড়েছেন কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কলেজের শূন্যপদ পূরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করা হলেও কোন সুরাহা হচ্ছে না।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৩টি বিষয়ে পাঠদানের জন্য শিক্ষকের পদসংখ্যা ২১। ইতিহাস বিভাগ ব্যতিত অন্য সব বিভাগে শিক্ষক সংকট চরম। ইংরেজি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ব্যবস্থাপনা, পদার্থ, রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা এবং গণিতে নিয়মিত কোন শিক্ষক নেই।
ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল হায়দার বলেন, মানসম্মত শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হলে অতিথি শিক্ষক দ্বারা পাঠদান করিয়ে তা কখনো সম্ভব নয়। এখানে ১০টি শাখায় কোন শিক্ষকই নেই। যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য বড় একটি হুমকিস্বরূপ।
তিনি বলেন, সরকার যদি বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হবো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উচ্চ শিক্ষার প্রসারে ১৯৭২ সালে ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের পর থেকে তৃতীয় শ্রেণির কোন পদ সৃষ্টি করা হয়নি। যার ফলে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কয়েকজন কর্মচারী কাজ করছেন। এছাড়াও কলেজে বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শক, গ্রন্থাগারিক, সহকারী গ্রন্থাগারিক, কম্পিউটার অপারেটর এবং ল্যাবরেটরী সহায়ক কর্মচারীর পদগুলোও সৃষ্টি করা হয়নি। বর্তমানে ১২ জন কর্মচারীর বিপরীতে ৪ জন এমএলএসএস, ১ জন ঝাড়ুদার, ১ জন নৈশ প্রহরী কর্মরত আছেন।
কলেজ ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আশীষ চক্রবর্তী বলেন, মাত্র চারজন শিক্ষক ও দশজন অতিথি শিক্ষক দিয়ে দেড় হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান সম্ভব নয়। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে কলেজের কার্যক্রম।
কলেজের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান শান্ত বলে, অনেক দূর হতে এখানে পড়তে আসি। কিন্তু শিক্ষক না থাকায় আমাদের পড়াশুনার অগ্রগতি হয় না। ফলে বাইরের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ার উপর নির্ভর থাকতে হয়। কিন্তু প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য সকলের থাকে না।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল করিম মজুমদারের ছেলে উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল করিম মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিন কলেজটিতে শিক্ষক শূন্যতা বিদ্যমান রয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। আমি আশা করি সংশ্লিষ্ট দফতর বিষয়টি সুরাহার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার সন্তানকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর সামর্থ্য আমার নেই। তাই আমি আশা করব আমাদের একমাত্র আশা-ভরসার প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক সংকট দূর হবে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, অতিথি শিক্ষকদের প্রতি ক্লাসে পাঠদানের জন্য যে সম্মানী ভাতা প্রদান করা হয় তাও তহবিল স্বল্পতার কারণে পরিশোধ করতে কষ্ট হচ্ছে। আগামী এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষা কথা বিবেচনা করেই আমি অতিথি শিক্ষক দ্বারা পাঠদান চলমান রাখছি। তারপর আমার পক্ষে আর সম্ভবপর হবে না।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে আমরা প্রতি মাসেই চিঠি প্রদান করে শূণ্যপদ সম্পর্কে অবহিত করি। স্থানীয় সংসদ সদস্য শিরীন আখতার সচিব বরাবর বিষয়টি জানানোর পর তারা একবার আমার সঙ্গে ফোনালাপ করে দেখব বলেছিলো। তারপর আর কোন সাড়া মেলেনি।
কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেন, বর্তমানে যে কয়জন শিক্ষক রয়েছে তাদের দাফতরিক কাজও করতে হয়। মফস্বল এলাকা হওয়ায় অনেক সময় শিক্ষকরা এদিকে আসতে চায় না। তারপরও আমি বিশ্বাস করি এই প্রতিষ্ঠানটি সচল রাখতে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে মন্ত্রণালয় দ্রুতই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক শূন্যপদগুলো পূরণে করবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার বলেন, কলেজের শূন্যপদ পূরণে আমি কয়েকবার সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবহিত করেছি। এ বিষয়ে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করছি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।