টুঙ্গিপাড়ায় দুরন্তপনাতে কেটেছে বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল

গোপালগঞ্জ, দেশের খবর

মাসুদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গোপালগঞ্জ | 2023-09-01 16:39:33

মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে সবুজ শ্যামল গ্রাম গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এই গ্রামেই জন্মেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রামটির শ্যামল-ছায়াতে দুরন্তপনায় কেটেছে বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল। মধুমতি নদীতে গাঁয়ের ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার কাটা, দৌড়-ঝাঁপ, হা-ডু-ডু, ফুটবল খেলায় তিনি ছিলেন বালকদের নেতা। সেই নেতা থেকে শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু থেকে বাঙালি জাতির পিতা।

বঙ্গবন্ধুর শৈশবকালের স্মৃতি আজও গেঁথে আছে টুঙ্গিপাড়ার স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের মনে। তারা তৎকালীন মুরুব্বিদের কাছে বঙ্গবন্ধুর ছাত্র রাজনীতির কথা শুনেছেন, বলেছেন বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোরের গল্প।

এই মাঠেই ফুটবল, হা-ডু-ডু খেলতেন বঙ্গবন্ধু
এই মাঠেই খেলাধুলা করতেন বঙ্গবন্ধু

স্থানীয় মুরুব্বিরা জানান, শিক্ষাজীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে জিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে বঙ্গবন্ধু খালের পানিতে পড়ায় দাদি আদরের নাতিকে আর ওই স্কুলে যেতে দেননি। এরপর বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ শহরের মিশনারি স্কুলে পড়াশুনা করেন।

বঙ্গবন্ধু ওইস্কুলে পড়াকালীন স্মৃতির কথা উল্লেখ করে গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, মুরুব্বিরা বলতেন, শেখ মুজিব নবম শ্রেণিতে থাকাকালীন ছাত্রদের উদ্দেশে এক ভাষণ দেওয়ার সময় তাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। সম্ভবত এটিই ছিল তার জীবনের প্রথম গ্রেফতার। পরে ছাত্রদের চাপের মুখে পুলিশ মুজিবকে ছেড়ে দেয়।

বাঘিয়ার খালেও গোসল করতেন বঙ্গবন্ধু
বাঘিয়ার খালেও গোসল করতেন বঙ্গবন্ধু

টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বোরহান উদ্দিন জানান, এই গ্রামের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু সবসময়ই ছিলেন মুজিবুর। তিনি সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। ঢাকা থেকে গ্রামে আসলেই গ্রামের প্রকৃতি ও গ্রামীণ খেলাধুলার সঙ্গে মিশে যেতেন। মধুমতি নদীতে তিনি গাঁয়ের ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, দৌড়-ঝাঁপ, দল বেঁধে হা-ডু-ডু, ফুটবল খেলতে ভালোবাসতেন।

বাংলাদেশের জন্ম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে জানার জন্য টুঙ্গিপাড়ার সমাধি কমপ্লেক্সে একটি পাঠাগার গড়া হয়েছে। এই লাইব্রেরিতে ১০ ক্যাটাগরিতে ৮ হাজার বই রয়েছে। বইগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও সমাধি কমপ্লেক্স এলাকায় বঙ্গবন্ধুর খেলার মাঠ, স্মৃতিবিজড়িত হিজল তলা, জমিদার বাড়ি, পুকুর, প্রিয় বালিশা আমগাছ ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়েছে।

মায়ের কবরের পাশেই দাফন করা হয় বঙ্গবন্ধুকে
মা-বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয় বঙ্গবন্ধুকে

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের বুলেটে সপরিবারে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে টুঙ্গিপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে তার সমাধি সৌধকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্স। লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো মার্বেল পাথরে নির্মিত সৌধের প্রতিটি কোনায় কোনায় রয়েছে শুধুই বেদনার চিহ্ন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর