রোববার (৮ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে ফকির লালন সাঁইজির দোলপূর্ণিমা উৎসব। এই উৎসব চলবে আগামী মঙ্গলবার (১১মার্চ) রাত পর্যন্ত। লালন সাঁইজির ধাম ছেঁউড়িয়াতে প্রতিবারের ন্যায় আয়োজিত এই উৎসবে যোগ দিতে গত রাত থেকেই সারা দেশ থেকে লালন ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন কুষ্টিয়া শহরে।
রোববার (৮ মার্চ) ভোর থেকেই কুষ্টিয়া শহরের নানা প্রান্তের আবাসিক হোটেলগুলোতে আগত লালন ভক্তদের ভিড় ছিলো উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এসব হোটেলে এক রাতেই রুম ভাড়া তিনগুণ বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ। সর্বনিম্ন দুই শত থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা হোটেল কক্ষের ভাড়া এক রাতের জন্য এখন রাখা হচ্ছে সর্বনিম্ন পনেরশত টাকা। এ নিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে লালনের দোলপূর্ণিমা উৎসবে যোগ দিতে আসা ভক্তদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।
অনলাইন ঘেটে কুষ্টিয়া শহরের যেসব হোটেল কক্ষের ভাড়া এক রাতের জন্য ২০০ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হতো সেসব হোটেলে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ২০০ টাকার কক্ষ এক রাতের জন্য রাখা হচ্ছে ৮০০ টাকা এবং ৭০০ টাকার কক্ষের ভাড়া রাখা হচ্ছে ১৫শত টাকা। শহরের মজমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার হোটেল আল হায়াত আবাসিক, সানমুন আবাসিক হোটেল, হোটেল রাতুল, হোটেল আল গালিব আবাসিক, হোটেল গোল্ডস্টার আবাসিক এবং হোটেল হলিডে আবাসিকসহ বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকা থেকে একদল তরুণ এসেছেন ফকির লালন সাঁইজির দোলপূর্ণিমা উৎসবে যোগ দিতে ৷ মজমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার হোটেল সানমুন আবাসিকের সামনে তাদের একজন পল্লব কর্মকারের সঙ্গে কথা হলে ক্ষোভ নিয়ে তিনি জানান, ঢাকা থেকে অনলাইনে দেখে এসেছি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে এই শহরে সর্বোচ্চ সুবিধা সম্পন্ন আবাসিক হোটেলের রুম ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু আসার পর হোটেলগুলোতে ভিন্ন চিত্র দেখছি। হোটেলগুলো ঘুরে দেখেছি এক রাত থাকার জন্য পনেরশত টাকার নিচে কোনো রুমই দিচ্ছে না তারা। হোটেল রাতুল আবাসিকের কথা উল্লেখ করে এই তরুণ আরও জানান, তারা ১৫শত টাকার নিচে কোনো রুমই আজ দিচ্ছে না।
অতিরিক্ত ভাড়া রাখার কারণ জানতে চাইলে হোটেল হলিডে ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার জানান, লালন উৎসবের কারণে আজসহ আগামী দুই দিন কুষ্টিয়া শহরের সব আবাসিক হোটেলগুলোতে রুম ভাড়া বেশি রাখা হবে। মেলা শেষে সবখানে আগের ভাড়াই বহাল থাকবে। তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ভাড়া রাখা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাড়া এত বেশি রাখা হচ্ছে তবুও দুপুরের পরে কোথাও রুম পাবেন না এ শহরে। শুধু লালন উৎসবের সময়ই এমন হয় অন্য সময় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মজমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক নৈশ প্রহরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, লালন উৎসব এলেই আবাসিক হোটেলগুলো ইচ্ছে মতো রুম ভাড়া রাখে ৷ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা অতিথিরা এতে চরম বিপাকে পরে এই জন্যে। মূলত শহরের বাইরে থেকে আশা নিরুপায় মানুষগুলোর থাকার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সুযোগে সদ্ব্যবহার করে হোটেলগুলো।
বছরে দুইবার মরমি সাধক ফকির লালন সাঁইজির ধাম ছেঁউড়িয়াতে তিরোধান দিবস ও ফকির লালন সাঁইজির দোলপূর্ণিমা উৎসব পালিত এবং উদযাপিত হয়। এসময় সারা দেশে থেকে মানুষ আসে কুষ্টিয়া শহরে উৎসব ও দিবসে যোগ দিতে। এত মানুষের থাকার ব্যবস্থা সংকুলান না হওয়ায় আবাসিক হোটেলগুলো নির্ধারিত ভাড়ার থেকে দ্বিগুণ বা তিনগুণ ভাড়া আদায় করে। এটা লালন উৎসবের সময় স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে কুষ্টিয়া শহরে।