নাম শ্রী চিরতা রানী। বাসা সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নে। জমিতে বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত তিনি। এক পাশে তার সন্তানকে রেখে কাদামাটিতে কাজ করছেন এই নারী। পাশাপাশি কাজ করছেন একই এলাকার ধীরেন্দ্র নাথ রায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা কাজ করা শেষে এবার এলো মজুরি নেওয়ার পালা।
চিরতা রানী মজুরি পেলেন ২০০ টাকা আর ধীরেন্দ্র নাথ পেলেন ৪০০ টাকা। পুরুষদের সঙ্গে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেও দিন শেষে নারী শ্রমিকদের মজুরি পেতে হয় অর্ধেক। তবে এ নিয়ে কষ্ট থাকলেও করার যেন কিছুই নেই চিরতার। কাজ না করলে অভাব-অনটন যেন লেগেই থাকে তার।
শুধু চিরতা রানী নয়, পরিনা, অনিবাল, দরশত, আম্বিয়াসহ জেলার অনেক নারী শ্রমিক আজ এই বৈষম্যের স্বীকার। সারাদিন নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করলেও মজুরিতে বিশাল পার্থক্য রয়েছে নারী শ্রমিকদের। শুধু মাত্র পরিবারের অভাব পূরণের জন্যই চুপ থাকতে হয় তাদের। একদিকে সংসারের চাপ অপরদিকে সন্তানের লেখাপড়া সব মিলিয়ে যেন এক অশান্তি। এরপরও দিনের পর দিন মাঠে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা।
নারীদের অধিকার রক্ষায় ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে এই দিবসকে যথাযথভাবে পালনের জন্য পৃথিবীর সব রাষ্ট্রকে আহ্বান জানানো হয়। প্রতিবছর সারা বিশ্বে এই ৮মার্চ একটি স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে পালিত হয়ে আসছে।
এরপরও দেশের বিভিন্ন জেলায় নারীর প্রতি নির্যাতন, হয়রানিসহ নানান ধরনের খবর আসছে। বিশ্বজুড়ে নারীর অগ্রগতি ও মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে অনেক পথ পাড়ি দেওয়া এখনো হয়তো বাকি রয়েছে। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য ও অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটিয়ে সমান অধিকারে বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নারীর এগিয়ে চলা আরও বেগবান হবে, এটাই নারী দিবসের প্রত্যাশা সকল নারীদের।
কথা হয় সদর উপজেলার রহিমান পুর ইউনিয়নের নারী শ্রমিক অনিবালার সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা সারাদিন স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে কাজ করি। কিন্তু দিন শেষে আমারে দেয় ২০০ টাকা আর আমার স্বামীরে দেয় ৪০০ টাকা। শুধু শুনেছি নারী পুরুষ নাকি সমান অধিকার। কিন্তু বাস্তবে এটার সঙ্গে কোনো দিক দিয়ে মিল নেই। শুধু স্বামীর টাকা দিয়ে সংসার চলে না। তাই আমাকেও কাজ করতে হয়।’
আকচা ইউনিয়নে একটি ইটভাটায় কথা হয় আমেনা কমিলা রানী নামের এক নারী শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে আসি আর সন্ধ্যায় যাই। দিন গেলে অমাদের দেয় ১৫০ টাকা। আর পুরুষরা পায় ৪০০টাকা। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরেই মজুরি পাই।’
ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রোকসানা বানু হাবীব বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নারীদের কর্মমুখী হিসেবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের অধীনে সেলাইসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই সমাজের সকল নারী যেন পুরুষের মতো সমান মজুরি পায়। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এজন্যই দিচ্ছি যাতে, তারা দক্ষতা অর্জন করে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়। তাহলে এই মজুরি বৈষম্য আর থাকবে না।’