ছেঁউড়িয়া থেকে: যৌবনকাল থেকেই বুড়ি হওয়ার গান গেয়ে তিনি হয়েছেন দেশ নন্দিত নারী বাউল শিল্পী। সেই কুড়ি থেকে বুড়ি হওয়ার আক্ষেপ তিনি গানে গানে ঝেড়েছেন পরাণের বান্ধবের উপর। দুনিয়াই যার জীবনে গান কিংবা গানই যার দুনিয়া তিনি কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
দোলপূর্ণিমায় লালন স্মরণ উৎসবে রোববার (৮ মার্চ) প্রথম দিনে গান গাইতে মঞ্চে উঠেই তিনি জানালেন, আমি বছরে দুইবার সাঁইজির স্মরণ উৎসবে আসি গান গাইতে। আমার বয়স হয়ে গেছে শরীর খুব একটা ভালো না। আমি যেন সাঁইজির গান গাইতে গাইতে দেহত্যাগ করি এই কামনা থাকে সব সময়।
বয়স বেড়েছে প্রকৃতির নিয়মেই তাই এবার আর কারো উপরে দোষ না চাপিয়ে মন দিলেন গানে। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে পরিবেশন করলেন লালন সাঁইজির "মদিনায় রাসূল নামে কে এলো আবার"৷ তার নিজস্ব গায়কীতে মন মাতালেন হাজারো লালন সাধু, ভক্ত ও অনুরাগীর। একটি গান গেয়েই মঞ্চ ত্যাগ করলেন শ্বাসকষ্টের কারণে।
এরপর লালন মঞ্চের পেছনেই বার্তা২৪.কমের পক্ষে থেকে কিছুক্ষণ আলাপ হয় কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সাথে। অল্প সময়ের এই আলাপনে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
বার্তা২৪.কম: নিজের মাঝে বাউল সম্রাট লালন শাহকে কিভাবে ধারণ করেন?
কাঙ্গালিনী সুফিয়া: সাঁইজি লালন আমার ভেতরে থাকে তাই আমি তার গান গাইতে পারি। আমি নিরক্ষর একজন মানুষ, পড়াশোনা কিছুই জানি না তবুও তার গান গাই। আমি মনে করি বাবা সাঁইজি আমার ভেতরে থাকেন, আমি তারই গলায় গান গাই। তিনি আমার ভেতরে না থাকলে আমার কোন ক্ষমতা নাই গান গাওয়ার। তার গান গেয়ে আমি অনেক কিছুই পাইছি, যা বলা যাবে না। বাতেনি ভেদ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। পিরিতির বাণ মেরে আমারে ঘরের বাহিরে করেছেন। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।
বার্তা২৪.কম: "পরাণের বান্ধবরে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে" যৌবনকাল থেকেই বুড়ি হওয়ার গান গেয়েই চলেছেন। এই গান নিয়ে কিছু বলেন।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া: গানই আমার সব। এই গান আমার সারা জীবনের অর্জন। শরীর চলে না, আর কথা বলবো না।
বার্তা২৪.কম: শেষ প্রশ্ন, এক দিকে পৃথিবী অন্য দিকে গান আপনি কোনটা বেছে নেবেন?
কিছু বলতে চাওয়ার আগে শ্বাসকষ্টের কারণে খানিক সময় কেশে নিয়ে টেনে টেনে বললেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া, 'এক দুনিয়া, এক গান। দুনিয়া দিয়াই গান আর গান দিয়াই দুনিয়া। গাইতো দুনিয়া নিয়াই তাইলে গানই দুনিয়া, দুনিয়াই গান। তারপরও আল্লাহ যা চান আমিও তাই চাই।'
জীবনের শেষ বেলায় এসে ঠেকেছেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া। শ্বাসকষ্ট সহ নানা অসুখ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। যৌবনকাল থেকে বুড়ি হওয়ার গান গেয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা এই বাউল শিল্পী এখন বয়সের ভারে সত্যিই বুড়ি হয়ে গেছেন। কিন্তু মঞ্চে তাকে এখনো পূর্ণাঙ্গ যৌবনের উদ্দীপনা নিয়েই গান গাইতে দেখা যায়।