ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় এক গৃহবধূকে বাড়িতে বেঁধে মারধর শেষে ব্লেড দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন তার স্বামী। ন্যাড়া মাথা নিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন ওই গৃহবধূ।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) দুপুরে উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী বাজার থেকে অভিযুক্ত স্বামী আমিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আমিরুল ইসলাম ওই এলাকার মৃত ফতে আলীর ছেলে। তিনি একজন কবিরাজ। এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছেন তিনি। ডজন খানেক স্ত্রী তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সংসার ছেড়েছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, নির্যাতিতা গৃহবধূর বাড়ী ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে। তার বাবা ও মায়ের মৃত্যুর পর বিয়ে করে তিনি স্বামীর নিপীড়ন নির্যাতন সহ্য করে নীরবে সংসার করছিলেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে ভাগিনা মিজানুর রহমানের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন।
নির্যাতিতা গৃহবধূ জানান, দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে স্বামীর সংসার করছেন তিনি। অল্প ভুল পেলেই বাড়ির গেট বন্ধ করে লোহার রড দিয়ে মারধর করতো স্বামী আমিরুল ইসলাম। গত দুবছর ধরে পর পুরুষের সঙ্গে মেলামেশার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছিল তার স্বামী আমিরুল। রাজি না হওয়ার অনেক মারপিটের শিকার হতে হয়েছে তাকে। সর্বশেষ গত শনিবার (৭ মার্চ) বালিয়াডাঙ্গী বাজারে এসে দুঃসম্পর্কের ভাগিনা মিজানুর রহমান ও স্থানীয়দের নিকট বিচার প্রার্থনা করেন ওই গৃহবধূ।
বিচার প্রার্থনা করায় ওই দিন বিকাল ৩টার সময় স্বামীর আমিরুল ক্ষেপে গিয়ে বাজার থেকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ীতে নিয়ে কাপড়-চোপড় খুলে মারধর করে। এক পর্যায়ে ব্লেড দিয়ে তার মাথার চুল কেটে দেয় এবং স্বামীর মল-মূত্র গ্লাসে করে খাওয়ায় বলে গৃহবধূ জানান।
স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে গৃহবধূ বলেন, স্বামীর সংসার আর করবো না। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে প্রয়োজনে ভিক্ষা করে খাবো।
আশ্রয়দাতা ভাগিনা মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার শুনার পর আমি পুলিশের সহায়তায় নিয়ে গত রোববার গৃহবধূকে উদ্ধার করে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি। আমি আশ্রয় দেওয়ার কারণে মোবাইলে আমাকেও হুমকি দিয়েছে গৃহবধূর স্বামী।
গৃহবধূর প্রতিবেশী ফরিদা বেগম ও নিহার বেগম জানান, আমিরুল তার স্ত্রীকে যখন মারপিট করে তখন সেখানে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। স্ত্রীর কাপড় চোপড় খুলে গেট বন্ধ করে লোহার রড দিয়ে মারপিট করে। চুল কেটে দেয়ার সময় আমরা বাইরে থেকে দেখলেও ভেতরে যাওয়ার সাহস পাইনি।
প্রতিবেশী আমিরুল ইসলাম জানান, চুল কেটে দেয়ার পর তার স্বামী মোবাইলে স্ত্রীর ভিডিও স্বীকারোক্তি নিয়েছে। যদি কোন শালিস বৈঠক বসে, সেখানে যেন বলে, গৃহবধূর স্বামীর তার চুল কেটে দেয়নি। নিজেই নিজের চুল কেটেছে।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি হাবিবুল হক প্রধান জানান, পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছে এবং দুদিন ধরে অভিযান চালিয়ে অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় থানায় গৃহবধূ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠাবে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল বলেন, মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া একটি জঘন্য ঘটনা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে গৃহবধূর পাশে আমি আছি, থাকবো। তিনি যেন সামাজিকভাবে আগের মত বসবাস করতে পারেন সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা করবো।