কল্যাণপুরের মৃৎশিল্প

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

এসএম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া | 2023-08-30 07:08:04

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প। যেখানে তৈরি হতো মাটির হাঁড়ি-পাতিল, থালা, গ্লাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র। মৃৎশিল্পের বাজার এখন দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য। তবে এখনও মাটির আধুনিক মানের তৈজসপত্র তৈরি করছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি।

এখানকার উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মূলধনের অভাবে চাহিদা মত পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না তারা। তবে অধিকাংশ ক্ষুদ্র শিল্পের মতন এখানেও রয়েছে পুঁজির সংকট। কোনো কাজ না থাকায় খুবই সামান্য বেতনে কাজ করে জীবনযাপন করছে এখানকার শ্রমিকরা।

মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল

সম্প্রতি কল্যাণপুর মৃৎশিল্প ঘুরে দেখা গেছে সেখানে প্রায় ৪০-৫০ জন্য নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছে। কেউবা মাটি আর পানি দিয়ে কাদা তৈরি করছে, কেউ থালা, বাটি ও গ্লাস তৈরি করছে। অনেকে আবার শুকানোর পর তা যত্নসহকারে পরিষ্কার করছে।

সেখানকার দায়িত্বরত ম্যানেজার রাজকুমার জানান, এই শিল্পের অতীত ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধশালী। হাঁড়িপাতিল থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হতো মৃৎশিল্পের নানা তৈজসপত্র। আমরা এখানে মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করে থাকি।

সাকিরন নেছা নামের এক নারী কর্মী জানান, মাত্র তিন হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করেন তিনি। স্বামী মারা গেছে। একটা মেয়ে আছে তাই কোনো উপায় না পেয়ে সংসার চালাতে এই কাজ বেছে নিয়েছেন।

মাটির তৈরি থালা

নাজমা খাতুন নামের আরেক নারী কর্মী জানান, এখানে কাজ করে মাস শেষে যে বেতন দেয় তার তিনভাগের এক ভাগ যাতায়াতেই খরচ হয়ে যায়। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে তাকে এই কাজ করতে হয়।

কল্যাণপুর মৃৎশিল্পের পরিচালক বটোকৃষ্ণ পাল জানান, আমার এই প্রতিষ্ঠানে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মূলধনের অভাবে চাহিদা মোতাবেক পণ্য সরবরাহ করতে পারছি না। ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প আবেদন সমবায় বরাবর দাখিল করলেও এখনও তা অনুমোদন হয়নি।

মাটির তৈরি জিনিস কিনতে আসা হাবিবুল আলম বলেন, বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। সে ঐতিহ্য বাঙালি বুকে লালন ও পালন করে আসছে যুগ যুগ ধরে। তেমনি বাংলার এক শিল্প মৃৎশিল্প। এই শিল্পের অতীত ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধশালী। হাঁড়িপাতিল থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হতো মৃৎশিল্পের নানা তৈজসপত্র। তবে এখন আর সেসবের অনেকটাই নেই বললেই চলে। আমি পরিবার পরিজন নিয়ে এই মৃৎশিল্প ঘুরতে এসেছি। পাশাপাশি পছন্দসই সব তৈজসপত্র এখান থেকে ক্রয় করেছি।

মাটির তৈরি তৈজসপত্র

কুষ্টিয়া জেলা সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের ব্যবহার কমে গেছে অনেকাংশে, আর এ শিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য সামগ্রী। এগুলো স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। তবু এগুলো ব্যবহার হচ্ছে অবলীলায়। তবে কুষ্টিয়ার তৈরি এই মাটির পাত্র আবার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে নতুন করে।

তিনি আরও জানান, একটি প্রকল্প সমবায় বরাবর দাখিল করলেও তা এখনও অনুমোদন হয়নি। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই মৃৎশিল্পের হারানো গৌরব ফিরে পাবে। পাশাপাশি আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

মৃৎশিল্প একসময়ে বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বাঙালির জীবন থেকে এই শিল্প একেবার মুছে যাবে না। হাজার বছর ধরে এসব পণ্য কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে আমাদের সংস্কৃতির সাথে। তাই এই শিল্পকে বাাঁচাতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর