এক দশকের বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠা নাটোরের বনপাড়া অস্থায়ী বাজার এখন কুলের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই বাজারেই মৌসুমে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার কুল ক্রয়-বিক্রয় করেন আড়তদার ও চাষিরা। প্রতি বছর এই বাজারে বিভিন্ন জাতের কুল বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে। এতে মৌসুমে কয়েকশত মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এছাড়া মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও পাইকারি কিনে পার্শ্ববর্তী বাজারগুলোতেও কুল বিক্রি করছেন।
বনপাড়া-হাটিকুলরুল মহাসড়কের প্রবেশদ্বার নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাইপাস এলাকায় মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম এই কুলের বাজার। বাজারে অস্থায়ী সাতটি আড়ত এবং আশপাশের প্রায় ২০টি ঘরে পাইকারি কেনাবেচা হয় বিভিন্ন জাতের কুল। প্রতি মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে শুরু করে পরবর্তী বছরের মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত একটানা সাড়ে তিন মাস পর্যন্ত এই বাজারের ব্যাপ্তিকাল। মৌসুমের শুরু থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কুল এই বাজারে আসা শুরু হলেও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর কুল আসতে সময় লাগে আরও মাসখানেক।
কুলের এই বাজারে বিক্রি হয় প্রায় ১০টি জাতের কুল। এদের মধ্যে অন্যতম বাউকুল, চাইনিজ কুল, বার্মিজ কুল, আপেলকুল, কাশ্মীরীকুল, বলসুন্দরী কুল ও নারিকেলি কুল। প্রতি মণ বাউকুল ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাইনিজ কুল ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, বার্মিজ ১৪০০ টাকা, আপেলকুল ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, কাশ্মীরি ২ হাজার ৬০০ টাকা, বলসু্ন্দরী ২ হাজার ৫০০ টাকা ও নারিকেলি ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সময় শুধু নাটোরের চাষিদের উৎপাদিত কুল এ বাজারে বিক্রি হলেও এখন চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও নির্ভর করছেন এই বাজারের ওপর। বাছাইকৃত বিভিন্ন জাতের কুল পর্যায়িতকরণ ও প্রমিতকরণের (বাছাই ও গ্রেডিং) মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত সুপার শপে সরবরাহ করা হচ্ছে। আবাদ মৌসুমে এই বাজারে শুধু নাটোরে উৎপাদিত কুলই বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার। পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর ফলন ভালো হলে আরও প্রায় ২০ কোটি টাকার কুল বিক্রি বাড়ে এই বাজারে।
সাভারের তেতুলঝোঁড়া ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম জানান, বনপাড়া বাজার দেশের সবচেয়ে বড় কুলের আড়ত। তাই এখান থেকে কুল কিনে তিনি বিক্রি করেন রাজধানী ঢাকায়।
প্রমিতকরণ শ্রমিক সাদ্দাম হোসেন জানান, কুল বাছাইয়ের পর তা দুটি গ্রেডে ভাগ করার জন্য দিনে ৩০০ টাকা মজুরি পান তিনি।
থ্রি স্টার ফলবিতানের স্বত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মৌসুমে কোটি টাকার কুল কেনাবেচা হলেও আমাদের জন্য নির্ধারিত কোনো বাজার নেই। আমাদের দাবি কুলের জন্য একটা আলাদা বাজারের।’
সিংড়ার কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, ‘হাইওয়ের পাশে ট্রাক দাঁড় করিয়ে কুল ওঠানামা করা খুবই দুরূহ। ভালো একটি জায়গা দিলে আমাদের কাজ সহজ হতো।’
বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন জুয়েল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বনপাড়ায় হাট-বাজারের সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। তবে কুলের ব্যবসা এখানে প্রতিষ্ঠিত হলেও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় একটি কুল বাজার প্রতিষ্ঠায় এই মুহূর্তে কিছু করা সম্ভব না। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা ব্যবসায়ীদের দাবিটা পূরণের চেষ্টা করব।’