অযত্ন, অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর জমিদার বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাড়িটির অধিকাংশ স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে প্রাচীন পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন এই জমিদার বাড়িটি অমূল্য প্রত্নসম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে বাড়িটি তার জৌলুস হারাতে বসেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শণার্থীরা এলেও ফিরছেন হতাশ হয়ে। ঐতিহ্য এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই জমিদার বাড়ির সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, মুসলিম শাসন আমলে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ঘনশ্যাম কুন্ডু নামের একজন ব্যবসায়ী কাপড়ের ব্যবসা করতে আসেন ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে হরিপুর উপজেলায়। তখন মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম নারী এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন।
খাজনা দিতে না পারায় মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু কিনে নেন। ঘনশ্যামের বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ আমলে হরিপুর রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার সময়ে রাজবাড়ির কাজ শেষ হয়নি।
রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক রাজর্ষি উপাধিতে ভূষিত হন। ৪৭’র দেশ ভাগের সময় স্বপরিবারে ভারতে চলে যান জমিদার। জগেন্দ্র নারায়ণ রায়ের সমাপ্ত করা রাজবাড়ির দ্বিতল ভবনে লতাপাতার নকশা এবং পূর্ব দেয়ালের শীর্ষে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে।
এক শতাব্দীরও বেশি পুরনো এই অট্টালিকাটির দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের বিলুপ্তপ্রায় নিদর্শনগুলো প্রাচীনত্বের বিবেচনায় খুব মূল্যবান না হলেও স্থাপত্য কীর্তি হিসেবে এখনো মানুষকে কাছে টেনে নিয়ে যায়। পরিত্যক্ত এই বাড়িটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বর্তমানে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুদা, জয়নাল, ফারুক জানান, সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে দরজা, জানালাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। সন্ধ্যায় চলে মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম। তদারকি না থাকায় বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে গজিয়েছে গাছপালা। খসে পড়েছে পলেস্তরা।
তারা জানান, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দফতর থেকে অনেক লোক আসে। তারা শুধু বলে যায় ঠিক হবে। কিন্তু কবে ঠিক হবে তা সঠিক কেউ জানে না। বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক লোক এই বাড়িটি দেখতে আসেন। কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরে যান।
দিন দিন দর্শনার্থী কমে যাচ্ছে বলেও জানান তারা।
পীরগঞ্জ থেকে রাজবাড়িটি দেখতে এসেছেন ফয়সাল চৌধুরী। কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, বন্ধুদের নিয়ে রাজবাড়িটি দেখতে এসে মনোক্ষুণ্ন হতে হলো। রাজবাড়ির কথা শুনলে মনে হয় অনেক সুন্দর একটি জায়গা হবে। কিন্তু এখানে এসে ভিন্ন চিত্র দেখলাম।
আরেক দর্শনার্থী ওবায়দুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, রাজবাড়িটির বেহাল দশা দেখে খুব খারাপ লাগলো। এখানে বেড়াতে আসার কোনো পরিবেশ নেই। দেয়ালগুলোতে আগাছা জন্মেছে। যেখানে সেখানে ময়লা আর্বজনা। সংস্কার করা হলে লোকজন এখানে এসে পিকনিক করতে পারতো। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত এটির সংস্কার করবেন।
জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের জেলার ঐতিহ্যবাহী কিছু জিনিস সংস্কার করা হয় না। সামান্য কিছু সংস্কার করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। জমিদারবাড়িটি সংস্কারের জন্য আমি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত এটিকে সংস্কার করা হবে।