চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার মোস্তফাপুর এলাকা থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে জানা যায় হত্যার শিকার ওই ব্যক্তির নাম খায়রুল আলম সাধন (৫০)। তিনি কুমিল্লা জেলা পরিষদ সদস্য ও মুরাদনগর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন।
ঘটনার দিন সকালে ঢাকার বনশ্রী এলাকার বাসা থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে মুরাদনগরের উদ্দেশে রওনা হন সাধন। পরিবারের ধারণা, কোনো প্রাইভেটকার যোগে মুরাদনগরে ফিরছিলেন তিনি। ছিনতাইকারীরা তাকে গাড়ির ভেতরে হত্যা করে মরদেহ মোস্তফাপুরে ফেলে যায়।
শুক্রবার (১৩ মার্চ) ভোরে জেলার চান্দিনা উপজেলার ছয়ঘরিয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ খোকন নামে এক ডাকাত সদস্য নিহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ডাকাত সাধন হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
শুধু সাধনই নয়, চলতি বছরে কুমিল্লায় ডাকাত-ছিনতাইকারীদের হাতে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা জেলার ১০৫ কিলোমিটার এলাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যার প্রায় প্রতিটি ঘটনা ঘটেছে ডাকাতি ও ছিনতাইকে কেন্দ্র করে।
কুমিল্লা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে ডাকাত দলের হাতে মোক্তার হোসেন সৈকত নামে এক যুবক খুন হওয়ার রহস্য বের হয়। গত ২১ জানুয়ারি ভোরে উপজেলার মিরশ্বানী বাজার এলাকা থেকে মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ তার মাথা ও মুখ থেঁতলানো মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তোফাজ্জল হোসেন (৩৮) নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী খুন হন। এ ঘটনায় ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত পিকআপ ও ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি নারকেল ব্যবসায়ী চারু মিয়ার মরদেহ মহাসড়কের বুড়িচং এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাকেও হত্যা করে ডাকাতরা।
গত বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) মহাসড়কের কুমিল্লা সদর উপজেলার ঝাগুরঝুলি বিশ্বরোড এলাকায় ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রের হাতে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন শহিদুল ইসলাম শাহীন নামে জেলার লাকসামের এক সাংবাদিক। ডাকাতরা ওই সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করেছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক সশস্ত্র ডাকাত ও ছিনতাইকারী গ্রুপ। এসব অপরাধীরা সন্ধ্যা নামলেই জেগে উঠছে মহাসড়কের মধ্যে। তারা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও পিকআপে যাত্রী পরিবহনের ফাঁদ পেতে একের পর এক ঘটিয়ে চলেছে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপরাধ দমনে অভিযান অব্যাহত রাখলেও কিছুতেই যেন থামানো যাচ্ছে না তাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৯ জানুয়ারি মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের বাবুর্চিবাজার নামক এলাকায় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক নারীসহ ডাকাত দলের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এ সময় বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়।
গত ১৭ জানুয়ারি মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার কবিলা মনিপুর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি ও দেশীয় অস্ত্রসহ ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া আরও বেশ কিছু অভিযানে ডাকাত-ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এসব প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম জানান, অতীতে যতগুলো ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, তার প্রতিটির রহস্য উদঘাটনসহ আসামি গ্রেফতার হয়েছে। আর হাইওয়ে পুলিশ এসব অপরাধ দমনে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত টহল দিয়ে থাকে। কোথাও অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়।