নাব্যতা সংকট নিরসনে লক্ষ্মীপুরে খাল খনন করার নামে স্থানীয় প্রভাবশালী ইকবাল হোসেন সেলিম পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার বালু বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ওয়াপদা খালের সদর উপজেলার উত্তর হামছাদি ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ থেকে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে এ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে কয়েকশ একর ফসলি জমি ও বেড়িবাঁধ। যেকোনো সময় তলিয়ে যাবে খাল পাড়ের অর্ধ-শতাধিক বাড়ি-ঘর।
স্থানীয়রা সেলিমকে ভূমিদস্যু আখ্যায়িত করা নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি কারো জমি দখল করিনি। আমাকে ভূমিদস্যু বলা ঠিক নয়। বালুদস্যু বলতে পারতো। কিন্তু সেটিও ঠিক হবে না। আমি চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অনুমতি নিয়ে নিজ খরচে বালু উত্তোলন করছি।
এদিকে ফসলি জমি ও বাড়িঘর রক্ষায় স্থানীয়রা একাধিকবার জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও জনপ্রতিনিধির কাছে অভিযোগ করলেও বালু উত্তোলন বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও সরেজমিনে দেখা যায়, বালু উত্তোলনের কারণে খালটি দ্বিগুণ চওড়া হয়ে গেছে। খাল পাড়ের বিপুল সংখ্যক গাছপালা তলিয়ে গেছে। ফসলি জমি, খালপাড়ের বাড়িঘর ও বেড়িবাঁধ হুমকিতে রয়েছে। বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বাধা দিতে গেলে সেলিম এলাকাবাসীকে মামলা দিয়ে হয়রানির করার হুমকি দেন। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে গত তিন বছরে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, বোর্ডের কয়েকশ কিলোমিটার খাল আছে। কিন্তু টাকার অভাবে তা খনন করা যাচ্ছে না। অনেক স্থানে খাল ভরাট হয়ে গেছে। ২০১৭ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর ইকবাল হোসেন নিজ খরচে নাব্যতা সংকট নিরসনে ওই খালটি খনন করে পলি মাটি অপসারণ করার জন্য আবেদন করেছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে খাল খননের জন্য অনুমতি চেয়ে ঢাকা অফিসে পাঠানো হয়েছে। পরে ঢাকা থেকে তাকে খননের অনুমতি দেওয়া হয়। এজন্য সেলিম বোর্ডকে রাজস্ব অনুযায়ী অর্থ জমা দিয়েছেন। কিন্তু বালু উত্তোলন করতে গিয়ে আশপাশের ফসলি জমি, বাড়িঘর ও বেড়িবাঁধের ক্ষতি করা যাবে না।
উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) হাফিজ উল্যাহ বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা কয়েকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এলাকাটি হুমকির মুখে আছে। জনস্বার্থে বালু উত্তোলন দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
বক্তব্য জানতে চাইলে উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এমরান হোসেন নান্নু বলেন, বালু উত্তোলন নিয়ে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, বালু উত্তোন বন্ধে আমরা চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দুটি চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা বালু উত্তোলন বন্ধ করবে না বলে জানিয়েছে। বালু উত্তোলনে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হলেও তা নেওয়া হয়নি। এটি বন্ধ করতে পরে আমরা মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান বলেন, বালু উত্তোলনে আশপাশের ক্ষতির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। পরে লোক পাঠিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্ষয়ক্ষতি দেখা যায়নি। যেভাবে বালু উত্তোলন করার কথা সেভাবেই করা হচ্ছে।