করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। এ ঘোষণার পর থেকে চরম সংকটে পড়েন কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন এ খাতে লোকসান হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এমনটায় দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে লোকসানের কারণে বকেয়া বেতন ভাতা ছাড়ায় শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, করোনা সতর্কতায় কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো নিষিদ্ধ হওয়ায় হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক, দোকানদার, পরিবহনসহ পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মারাত্মক লোকসানের মুখে। প্রতিদিন কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোটেল-মোটেল, রেস্তোরা, পরিবহণশ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের।
অন্যদিকে বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে কক্সবাজার জেলা শহরের পর্যটন জোনের আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরায় কর্মরত প্রায়ই ৩৫ হাজার শ্রমিককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে মালিকেরা। এ নিয়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে শ্রমিকদের মাঝে। বকেয়া বেতন পেতে মালিকদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শ্রমিক নেতারা।
হোটেল ম্যানেজার ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, কলাতলী থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত যে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল, কটেজ ও রেস্তোরাঁ আছে সেখানে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। করোনার প্রভাবে এদের মধ্যে প্রায়ই ৩৫ হাজার শ্রমিককে ছুটিতে পাঠিয়েছে মালিকপক্ষ। এই ৩৫ হাজার শ্রমিকের আয়ের উপর প্রায় দেড় লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। অথচ মালিকপক্ষ তাদের বেতন-ভাতা না দিয়ে বাধত্যমূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে। এই দুর্যোগ মুহূর্তে মালিকদের মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করা দরকার বলেও দাবি এ নেতার।
শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, রেস্তোরাঁ থেকে প্রায়ই ২০ হাজার শ্রমিককে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আর হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউজ ও কটেজ থেকে প্রায়ই ১৫ হাজার শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আসলে কিছু মালিক শ্রমিকদের ঈদ বোনাস ও ভাতা না দেওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন করোনাভাইরাসের এ সময়টাকে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বার্তা ২৪.কমকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হোটেলের কর্মচারীদের ছুটিতে পাঠানোর সময় তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছি। এই ক্রাইসিস যতদিন থাকবে ততদিন তাদের বেতন ভাতা অব্যাহত থাকবে।
কলাতলী মেরিনড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের আওতাভুক্ত শ্রমিকদের ঈদের আগে সঠিক সময়ে বোনাস প্রদান করা হবে। এটি আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চলতি মাসের শেষভাগে সংগঠনের বৈঠকে করা হবে। বৈঠকেও এইসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হবে। আশা করছি মানবিক দিক বিবেচনা করে সকল হোটেল মালিক এই প্রস্তাবনা সাদরে গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরায় বেতন ভাতা পরিশোধ হয়নি এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে মালিক-শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে বসে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।