রাঙামাটির দুর্গম অঞ্চল সাজেক ইউনিয়নের তিনটি পাহাড়ি গ্রামে হামরোগে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সাজেকের অরুন পাড়া, লাংকাটান পাড়া ও হাইচ্যাপাড়া এলাকায় গত ২০ দিনে আট শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
গত সোমবার (২৩ মার্চ) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গেরাতি ত্রিপুরা (৯) ও মঙ্গলবার রাতে (২৪ মার্চ) রাতে খিয়াংতি ত্রিপুরা (১৩) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ১৭০নং তুইছুই মৌজাস্থ ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার জৌপৈই থাং ত্রিপুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১১৯ জন বলে জানালেও স্থানীয় হেডম্যান জানিয়েছেন আক্রান্তে সংখ্যা ১২৩ জন। এমতাবস্থায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বমোট পাঁচটি মেডিকেল টিম আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বিগত এক মাস ধরেই এই হামরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও রাঙামাটির জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এ ধরনের ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট টিকাদান বিভাগের কোনো গাফিলতি আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখাসহ সার্বিক বিষয়টি তদন্ত করার লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছে রাঙামাটির জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: সাজেকে হামে ১৪ দিনে ৫ শিশুর মৃত্যু, আক্রান্ত শতাধিক
জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, ‘এরইমধ্যে সাজেকের আক্রান্তদের জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। আরও সহায়তা সেখানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে প্রশাসন।’
সাজেকের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) ম্যানেজার ডা. মাওলা বক্স চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. আরিফুল ইসলামসহ ঢাকা থেকে চার সদস্যের একটি চিকিৎসক বাঘাইছড়ি সফর করেছেন। সেখানে তারা রাঙামাটির জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বৈঠক শেষে ডা. মাওলা বক্স চৌধুরী বলেন, ‘বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নটি খুবই দুর্গম। যেখানে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর পায়ে হেটে পৌঁছাতে একদিন লেগে যায়, আমরা সংবাদ পাওয়া মাত্রই সমন্বয় করে সেখানে পাঁচটি মেডিকেল টিম পাঠিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় অসুস্থ রোগীকে উপজেলা সদরে আনা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এছাড়া এলাকার লোকজন কিছুটা কুসংস্কারেও বিশ্বাসী। আমরা চেষ্টা করছি সাজেক অঞ্চলটিকে নিয়ে একটি বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে।’
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই সাজেকের তরুণ-তরুণীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করবে ইপিআই কর্তৃপক্ষ। যাতে করে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সেখানে তারা জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে পারে। এছাড়া রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাজেকে পুষ্টিকর খাদ্যশস্য দেওয়ার ব্যাপারেও কাজ চলছে।