করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিনামূল্যে বিতরণের লক্ষ্যে ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা কম খরচে তৈরি করছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। গত কয়েক দিন ধরে করোনা আতঙ্কের মধ্যে বাজারে যখন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সংকট দেখা দিয়েছে, তখন কেবলমাত্র বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে শহরের স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে বিতরণ করছেন কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আর এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে সহায়তা করেছেন ভোলা সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগ ও আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এ আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল । কোনো ধরনের প্রতিষেধক না থাকায় সতর্কতা, সচেতনতা ও পরিষ্কার থাকাই আপাতত এ ভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র কৌশল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে হাতের মাধ্যমে এ ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার কথা জানিয়ে নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু বাজারে চাহিদার তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে অনেকে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষ। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ও বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভোলা সরকারি কলেজ।
ভোলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. গোলাম জাকারিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় কাজটি করার উদ্যোগ নেন রসায়ন বিভাগ ও কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গুরুত্বপূর্ণ এ কাজে আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান। ভোলা সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এস এম বশীর উল্লাহ তত্ত্বাবধায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করা হয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আর ভোলা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ছুটিতে না থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে।
এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে একাদশ শ্রেণি বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম, তাইয়্যেবাতুন নাজিয়া, সায়মা আক্তার, সুমাইয়া আক্তার, মালিহা জাহান, মো. জায়েদ আনজাম, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাবুবুর রহমান এবং মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের ঐশি দত্ত সহ আরো অনেক শিক্ষার্থী জানায়, করোনা মোকাবিলায় মানুষের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগছে। এখন সবাই সচেতন হলে আমরা এই রোগ থেকে মুক্ত হতে পারবো। শিক্ষার্থীরা বলেন, এমন পরিস্থিতি আমাদের বাসায় থাকতে বলা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা সবাই মিলে সাধারণ মানুষের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে সবাই সুরক্ষা থাকতে পারবে বলে আশাকরি।
ভোলা সরকারি কলেজ রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক এস এম বশীর উল্লাহ জানায়, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এর সংক্রমণ ঘটেছে। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে বাজারে যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্বল্পতা কিছুটা কাটাতে সহায়তা করবে। কলেজের প্রায় ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে সহায়তা করেছে।
প্রাথমিকভাবে ৫০ ও ১০০ মিলি গ্রামের ৮০০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত উপকরণে এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হয়েছে বলে জানান। গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসন মহিন জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারে সংকট দেখা দিয়েছে। যখন শুনলাম ভোলা সরকারি কলেজ এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তখন আমরা কলেজের উদ্যোগের পাশে দাঁড়াই। এর মাধ্যমে দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে বলে আশাকরি।
পরে ভোলা সরকারি কলেজের সামনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ উল্যাহ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জামাল হোসেন, দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মো. ইকবাল হোসেনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।