একের পর এক গুজবে নির্ঘুম রাত কাটালেন হবিগঞ্জবাসী। গুজব সৃষ্টিকারী আর তাতে বিশ্বাসকারীরা যেমন রাতভর ঘুমাতে পারেননি, তেমনি তাদের প্রচারণায় চোখের পাতা এক করতে পারেননি অন্যান্যরাও।
জানা যায়, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সারাদেশের বেশকিছু জেলার সঙ্গে হবিগঞ্জেও বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দিবাগত রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন মসজিদ ও বাসা বাড়িতে অসময়ে সমস্বরে আজান দেন মুসল্লিরা।
তবে শুধু আজান নয়, আজানের পরপরই বড় ধরনের ভূমিকম্প হবে দাবি করে রাত ১টার দিকে রাস্তায় নেমে আসেন কিছু উন্মাদ প্রকৃতির মানুষ। নিমেষেই গুজবটি ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি উপজেলা ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে বিশেষ এই আজান ঝড়ের গতিতে ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয়ে যায়। গ্রামে গ্রামে শুরু হয় আতঙ্ক। মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে ভুমিকম্প থেকে বাঁচতে আজানের পাশাপাশি কিছু উশৃঙ্খল প্রকৃতির লোক রাস্তায় নেমে এসে মিছিল শুরু করেন। এতে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে।
শুধু মুসলমান সম্প্রদায়েই নয়, বড় ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে এমন গুজবে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষজনেরা মাঝরাতে শুরু করেন কীর্তন। মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে নগর কীর্তন শুরু করেন হিন্দু নারী-পুরুষরা। আতঙ্কে কাবু হয়ে পড়েন শিশুসহ সব বয়সী মানুষ।
এ গুজব শেষ হতে না হতেই সিলেট থেকে হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে নতুন আরেক গুজব। নতুন গুজবে বলা হয়, সিলেটে একটি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। বাচ্চাটি মৃত্যুর ২ মিনিট আগে সবাইকে বলেছে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে হলে চিনি ছাড়া আদা-চা খেতে হবে। এবার শুরু হয়ে যায় চিনি ছাড়া আদা চা খাওয়ার ধুম। এভাবেই একের পর এক গুজবে নির্ঘুম রাত কেটেছে হবিগঞ্জবাসীর।
সচেতন মানুষজন বলছেন, হবিগঞ্জের মানুষের সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে এক শ্রেণির মানুষ সমাজে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। যখনই দেশের ক্রান্তিকাল আসে, তখনই তারা বিভিন্ন গুজব সৃষ্টি করে দেশের সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে।
পরিচয় গোপন রাখার সর্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে- ইতোমধ্যে গুজব সৃষ্টিকারী কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় এমন গুজব সৃষ্টি করেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণও পাওয়া গেছে। সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।