করোনাভাইরাস সংক্রামণ ঠেকাতে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ সরকারের। এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা। যে কারণে গেলো কয়েকদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। জরুরি প্রয়োজনে কিছু যানবাহন চলাচল করলেও তার সংখ্যা খুবই কম।
অপরদিকে করোনায় লোকজনের উপস্থিতি কমেছে স্থানীয় হাট বাজারগুলোতে। ব্যস্ততম রাজধানীও এখন ফাঁকা। যে কারণে বিপাকে পড়েছে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিরা। ফলন ভালো হলেও স্থানীয় পাইকারি বাজারগুলোতে চাহিদা নেই সবজির। কাজেই নাম মাত্র মূল্যে স্থানীয় বাজারেই সবজি বিক্রি করছে কৃষকেরা।
সোমবার (৩০ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিদের সাথে আলাপ হলে এমন বিষয়গুলোই তুলে ধরেন তারা। অপরদিকে দিনের পর দিন সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম দ্রুতগতিতে বাড়ছে বলে জানান অনেকেই। এভাবে চলতে থাকলে লোকসানের পড়তে হবে বলে মন্তব্য চাষিদের।
জেলার সাটুরিয়া উপজেলার জান্না এলাকার সবজি চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে মোট তিন বিঘা জমিতে লাউ, শিম ও ঢেঁড়সের আবাদ করেছেন। ফলনও খুব ভালো। তবে গেলো কয়েকদিন ধরে বাজারে সবজির কোনো চাহিদা নেই। যে কারণে শিম এবং লাউয়ের ফলন থাকা সত্বেও বাজারজাত করছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আব্দুল হক নামে এক কৃষক বলেন, চলতি মৌসুমে অর্ধ লাখ টাকা ব্যয় করে দুই বিঘা জমিতে শসার আবাদ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো। পাইকারি বাজারে চাহিদা না থাকায় প্রতি মণ শসা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিনশো টাকায়। এতে করে শুধুমাত্র শ্রমিক, বাজারজাত ও সার এবং কীটনাশকের খরচ আসছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যয় করা টাকা তুলতেই হিমশিম অবস্থায় পড়তে হবে জানান তিনি।
সবজি চাষি আব্দুস সামাদ বলেন, অনুকূল আবহাওয়ায় চলতি মৌসুমে সবজির ফলন হয়েছে ভালো। তবে পাইকারি বাজারে ক্রেতা নেই। যে কারণে সবজি চাষিদের এবার বেশ লোকসানে পড়তে হবে। এছাড়াও সার, কীটনাশক ও বীজের দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকারিভাবে কৃষকদের জন্য সাহায্য সহযোগিতার দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সার ব্যবসায়ী জানান, সপ্তাহ খানেক ধরে সার, বীজ ও কীটনাশকের গাড়ি আসছে না। সময়মতো দোকানও খোলা রাখা যাচ্ছে না। পরিচিত কৃষকদের ফোন কলের কারণে মাঝে মাঝে দোকান খুলে কোনো রকমে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। আমদানি কম থাকায় আগের চেয়ে অল্প কিছু বেশি দামে বিক্রি ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান আলী বিশ্বাস বার্তা২৪.কম-কে জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৮ হাজার ১৯৬ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। তবে বাজারদর কম থাকায় উপযুক্ত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা। বিষয়টি অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।