‘দেশত ইগলা (এগুলো) কি আসলো বাহে। যেটেসেটে (যেখানে-সেখানে) করুনা ওগের গপ্প করে মানুষগুলা। মুই মানষের বাড়ি বাড়ি ভিক্যা করি খাম। হামার (আমার) গেরামের চকিদ্যারের বেটা বাড়িত থাকি বাড়াবার মানা করছে। ভয়ে মেলাদিন বাড়িত বসি আছুনু। একন এ্যালা মোর পেট চলে না। তায়, পেটের ভোকে আজ বাড়িত থাকি ভিক্যাত বাড়াছোম বাহে।’
সোমবার (৩০ মার্চ) দুপুরে আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কলিম উদ্দিন (৭০) নামের এক ভিক্ষুক। তিনি ওই উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চলে তার।
কলিম উদ্দিনের ভাষ্যমতে, সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধাবাসী। ফলে দিনমজুর মানুষগুলো বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। এ কারণে দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। এসব মানুষের ঘরে ঘরে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। দৈনন্দিন রোজগার করতে না পেরে থমকে গেছে তাদের জীবনযাপন। চরম বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষরা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করোনা আতঙ্কের মধ্যেও গোপনে এদিকসেদিক ছুটছেন অসহায় গরীব পরিবারের লোকজন।
এসব ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে ভিক্ষুক কলিম উদ্দিনও একজন। তিনি নিরুপায় হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছে খাবারের সন্ধানে। কুঁজো এই মানুষটি পেটের তাগিদে ছুটছেন অন্যের বাড়ি বাড়ি। চাচ্ছেন দুমুঠো চাল ভিক্ষা। কেউবা দিচ্ছেন আবার কেউবা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জাহিদ হোসেন মণ্ডল নামের এক গৃহস্থালি বার্তা২৪.কম-কে জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ভিক্ষুক তো দূরের কথা, কোনো আত্মীয়-স্বজনকেও বাড়িতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মেজবাউল হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গৃহবন্দী মানুষদের ত্রাণ বরাদ্দ এসেছে। এরইমধ্যে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু হচ্ছে।’