এক পাশে পাহাড়, অন্য পাশে সমুদ্র। তার বুক চিরে নির্মিত হয়েছে দেশের একমাত্র মেরিনড্রাইভ সড়ক। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার সড়ক এখন যানবাহন শূন্য।
আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর এবারই প্রথম এমন দৃশ্য দেখা গেছে মেরিনড্রাইভে। অন্যদিনের চেয়ে প্রকৃতি এখানে নতুন করে ডানা মেলেছে। চারদিকে শুন-শান নিরবতা। নেই গাড়ির চাপ। সব মিলিয়ে যেন সবুজের আবরণে ঢাকা পড়েছে সড়কটি।
সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, মেরিনড্রাইভ সড়কের পাশ দিয়ে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ। মাঝে মাঝে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলাচলরত কিছু গাড়ি চললেও নেই সাধারণ পরিবহনের চাপ। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৮ মার্চ কক্সবাজারের সব পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। তারপর থেকেই প্রায় যানবাহন শূন্য হতে থাকে দেশের একমাত্র মেরিনড্রাইভ সড়কটি। ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশের মতো এ সড়কেও যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। মানুষের ও যানবাহনের চাপ নেই। ফলে নির্বিঘ্নে বেড়ে ওঠা গাছপালায় সড়কের দুই পাশজুড়ে এখন শুধু সবুজ আর সবুজ।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলাতলী থেকে মেরিনড্রাইভে সড়কে যেসব হোটেল-মোটেল রয়েছে, সবগুলোই বন্ধ এখন। সড়কের পাশ দিয়ে গড়ে ওঠা দরিয়া নগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেকসহ কয়েকটি পর্যটন স্পট বন্ধ রয়েছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা খুবই কষ্টে দিনপার করছেন। জন ও যান শূন্য থাকার কারণে প্রকৃতি এখানে নিজের আসল রূপ ফিরে পেয়েছে।
হিমছড়ি এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম বার্তা ২৪.কমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পর থেকে এমন জনশূন্য ও যানবাহন শূন্য হয়নি এ সড়ক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের মতো এটিও বন্ধ। তবে নেড়া গাছগুলোতে নতুন করে পাতা ফুটতে দেখে সুন্দর লাগছে। রাস্তার দুই পাশজুড়ে সবুজে ভরে গেছে।
পাটুয়ারটেকের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, কোনো দিন এমন শুন-শান নিরবতা দেখিনি। পর্যটকবাহী গাড়ি তো দূরে থাক, স্থানীয় পরিবহনগুলোও বন্ধ। কিছু এনজিও ও ইজিবাইক চললেও যানবাহনের চাপ নেই। পর্যটক আসা বন্ধ হওয়ায় খুবই কষ্টে দিন পার করছি। তবে মানুষের আনাগোনা না থাকায় সাগরের পানি নীল হয়েছে।
দরিয়া নগরের ব্যবসায়ী নজির আহমদ বলেন, মেরিনড্রাইভের দুই পাশে অন্যরকম পরিবেশ বিরাজ করছে। এ সময়টায় ভরপুর থাকতো পর্যটকবাহী ট্যুরিস্ট জিপ। সেখানে সড়কটি একেবারেই ফাঁকা।
কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতা মুফিদুল আলম মুফি বার্তা২৪.কমকে বলেন, এ রকম মেরিনড্রাইভ আগে কখনো দেখা হয়নি বা কেউ দেখেনি। চার দিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। পর্যটকের চাপ না থাকায় প্রকৃতি নিজেকে নতুন রূপে মেলে ধরেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ধরে রাখতে এখানে মাঝে মাঝে পর্যটক ও যানবাহন বন্ধ রাখা উচিত।
কলাতলী-মেরিনড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, পর্যটক না থাকায় যানবাহনও বন্ধ। তাই আমাদের প্রায় শতাধিক হোটেল-মোটেলও বন্ধ। সব কিছু মিলিয়ে এখন অন্য রকম পরিবেশ মেরিনড্রাইভে। এসব বন্ধ থাকায় পরিবেশের জন্য খুবই ভালো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৬ মে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের একমাত্র মেরিনড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের দুই পাশজুড়ে রয়েছে ঝাউবীথি।