নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্যই খারাপ। সোনালি ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবছরই হাওরের জমি জুড়ে বোরো ধান চাষ করেন কৃষকরা। কিন্তু গত কয়েক দফা আগাম বন্যার কারণে ধান ঘরে তুলতে পারেননি তারা।
চলতি বছরও অনেক আশা নিয়ে জমি আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। ফলনও ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যার তেমন আশঙ্কা নেই। তবুও সোনালি ধান ঘরে তোলা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। কারণ সেখানে ধান কাটা শ্রমিকদের তীব্র সংকট রয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনায় এ বছর ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওর এলাকায় ৪০ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। পুরো জেলায় এবার ১১ লাখ ১৯ হাজার ৫৬১ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম হতাশায় রয়েছে কৃষক।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সরেজমিনে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, মাঠ জুড়ে শুধু সোনালি পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। ধান কাটার মৌসুম এখন। তবে করোনাভাইরাসের কারণে ধান কাটা শ্রমিকদের তীব্র সংকট রয়েছে। কোনো কোনো কৃষক নিরুপায় হয়ে নিজেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধান কাটতে মাঠে নেমেছেন।
কৃষকদের দাবি, সরকার যদি নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কৃষকদের ধান কাটার যন্ত্র দেন, তাহলে তারা নিজেরাই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন।
জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের কৃষক মির্জা রফিকুল হাসান বলেন,‘এখন বোরো ধান কাটার সময়। ধান কাটা শ্রমিকদের আগাম টাকা দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে শ্রমিকরা এখন আসতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। পাকা ধান নিয়ে এখন বিপদে আছি।’
জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাওর জুড়ে এখন সোনালি ধান। কিন্তু শ্রমিক নেই। ঋণের টাকা দিয়ে ধান আবাদ করেছিলাম। এখন পাকা ধান কাটতে না পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, ধান কাটার শ্রমিক সংকট রয়েছে। তাই কৃষকদের ধান কাটার জন্য ৪২টি হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হবে। প্রয়োজনে আরও মেশিনের ব্যবস্থা করা হবে।