করোনাভাইরাসের অশনিসংকেতে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। সেই সুযোগে প্রকৃতিও যেন কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মানুষের শৃঙ্খল থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া প্রকৃতি ধীরে ধীরে মেলে ধরতে শুরু করেছে তার আপন সৌন্দর্য।
প্রকৃতির সেই সৌন্দর্য মেলে ধরার রেশ কিছুটা পড়েছে বুনো ভাঁটফুলের ওপর। তাই বসন্তের ক্রান্তিলগ্নে ফুলটিও ফুটে উঠেছে অপরূপ রূপে।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) সকালে ময়মনসিংহের গৌরীপুর-কলতাপাড়া সড়কের দু’পাশে দেখা মিলে চোখ ধাঁধানো সাদা সাদা বুনো ভাঁটফুলের। সড়কে যান চলাচল না থাকায় ফুলের ওপর ধুলোর আস্তরণ ছিল না। তাই শুভ্র সুন্দর ফুলগুলোতে সহজেই পথিকের দৃষ্টি আটকে যাচ্ছিল।
স্থানীয়রা জানান, দেখতে সুন্দর হলেও ভাঁটফুলের কদর কম। চলাচলের পথে ফুটন্ত ফুলগাছ পথিকের পায়ে পিষ্ট হয়। অনেকে আবার ফুলগাছ কেটে রোদে শুকিয়ে জ্বালানি তৈরি করে। তবে সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস আতঙ্কে মানুষ ঘরবন্দী হওয়ায় ভাঁটফুল গাছগুলোতে মানুষের থাবা পড়েনি। তাই দিনের আলোয় প্রকৃতিতে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ছড়াতে পারছে।
ভাঁটফুল গুল্মজাতীয় গাছ। ছোট আকৃতির এই গাছ ঝোপালো হয়। গাছের থোকায় থোকায় ফুল ফুটে। রাতে ফুল থেকে বেশ গন্ধ ছড়ায়। ভাঁটফুলের পাঁচটি পাপড়ি থাকে। সাদা ফুলের গোড়ার দিকটা হালকা বেগুনি রঙের। ফুল থেকে ফল হয়। ফলের বীজ থেকে চারা জন্মায়।
ভাঁটফুল গাছের ভেষজ ও ঔষধি গুণ রয়েছে। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চৈত্র সংক্রান্তিতে এই ফুলের আরাধনা করেন।
দেশের বন-জঙ্গল, ঝোপঝাড়ে অযত্ন অবহেলায় বেড়ে উঠে ভাঁটফুল গাছ। বসন্ত এলে সাদা সাদা ফুলে ছেয়ে যায় গাছ। তখন গাছ থেকে সহজে চোখ ফেরানো যায় না।
গৌরীপুর পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘আমরা ঘরবন্দী বলেই প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সড়কের পাশে ভাঁটফুল সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে, সমুদ্র সৈকতে ডলফিন সাতার কাটছে, ভোরে নির্মল হাওয়ার সঙ্গে পাখির কিচির-মিচির শুনছি। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও পরিবেশদূষণ কমে গেছে। তাই আজকের পরিস্থিতি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে আমাদের প্রকৃতিকে আমাদেরই বাঁচাতে হবে। নয়তো প্রকৃতিও প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠবে।’