রাস্তার পাশেই ক্লান্তিহীন দৃষ্টিতে বসে আছেন এক বৃদ্ধ। কাছে যেতেই মুখে মাস্ক পড়ে নিলেন। ক্যামেরা হাতে দেখে বুঝলেন সাংবাদিক হয়তো ত্রাণ দিতে এসেছে। কিন্তু ছবি তোলার সময় বলে উঠলেন, ছবি তোলে কি হবে? কাজ কাম তো নাই, ঘরে খাবার তো নাই।
শনিবার (৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ ছফর উদ্দিন এভাবেই বার্তা২৪.কমের প্রতিবেদককে এসব কথা বলছিলেন।
বৃদ্ধ ছফর উদ্দিনের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা চলবলা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামে।
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে কোনো কাম-কাজ নাই, তাই এ্যালা (এই জন্য) পকেটে টাকাও নাই। এমন করি কতদিন আর বসি (বসে) দিন কাটামো (কাটাবো)। ভাইরাস ধরবে দেখি বাহিরত (বাইরে) যাইও না, হামারা (আমরা) কি না খেয়া (খেয়ে) মরে যাম (যাব) বাহে?
ছফর উদ্দিনের মতো আরেক বৃদ্ধ আব্দুল কাদের মিয়া। তিনি পড়াশোনা না করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে বাড়িতে রয়েছেন। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যান না তিনি। তার অভিযোগ, দুই ছেলে ঢাকায় রিকশা চালায়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে রিকশা নিয়ে এখন আর বের হয় না। তাই বাড়িতেও টাকা দেয় না দুই ছেলে। অভাবে পড়ছে পরিবারটি।
ওই গ্রামের রহমান মিয়া জানান, দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষরা সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন। যারা দিন আনে দিন খায় তারা কাজের সন্ধানে বাইরে বের হতে পারছেন না। যার ফলে জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।
লালমনিরহাট সদর উপজেলাসহ পাটগ্রাম, আদিতমারী, কালীগঞ্জ ও হাতীবান্ধার অসহায় নিম্নআয়ের মানুষগুলোর দুর্দশার একই চিত্র ফুটে উঠেছে। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা দাবি করছেন ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ত্রাণের তালিকা করছেন সরকার দলীয় লোকজন দিয়ে। তাই নিম্নআয়ের মানুষজনরা না পেয়ে পাচ্ছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আবার এক বাড়িতে একাধিকবার খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
এদিকে, লালমনিরহাটের বেশির ভাগ কৃষক তামাক ও ভুট্টা চাষের ওপর নির্ভরশীল। অনেকেই ভুট্টা ও তামাক ক্ষেত থেকে বাড়িতে তুলেছেন। তবে সাপ্তাহিক হাট-বাজার বন্ধ থাকায় এসব বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। তাদের দাবি, সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেন এই সব ফসল তারা দ্রুত বিক্রি করতে পারেন। বিক্রি করতে না পারলে তাদের অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এখন পর্যন্ত ২১০ মেট্রিক টন জি আর চাল বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এই সামগ্রী নিয়ে কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।