বিজ্ঞান বলে জৈবিক কারণে কৈশোর থেকে বুড়ো হওয়ার দুটো রঙ লাল আর হলুদ। মানে এই যে, যত বয়সের দিকে যাব লাল অস্থিমজ্জাকে অপসারণ করে হলুদ অস্থিমজ্জা মিউজিক্যাল চেয়ার খেলবে আমাদের সঙ্গে। মানে একটা করে বছর এগোচ্ছে আর বুড়ো হচ্ছি। সত্যি কি বুড়ো হচ্ছি? যদি না মানি ? যদি মনে করি একটা কেবল পরিবর্তন, যদি মনে করি কেবল ঋতু পরিবর্তন, দেহ কি স্মলার দ্যান মন হয়ে জিতিয়ে দেবে? এত কিছু সত্যি আমরা কেউ জানি না। কারণ পরিবেশ লাল আর হলুদের মধ্যে লাল নিয়ে হয়তো উত্তেজিত অর্থাৎ যৌবন নিয়ে তারা বেশি ভাবিত কিন্তু “WHO” বলছে যদিও তারা পঞ্চান্ন পরবর্তী বয়সকে বয়স্কের দ্রাঘিমায় এনেছে কিন্তু তবু যদি অ্যাক্টিভিট তথা সক্রিয়তার মাত্রা তীব্র থাকে, শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া পোষ মেনে যায় তাকে বুড়ো বলা হবে না।
একটা সময় ছিল বুড়ো মানুষ, বুড়ো লোক বলে মানুষের অবশিষ্ট বয়সকে অপমান করা হতো। ব্রিটিশরা তাকে পরিবর্ধিত করে “প্রবীণ নাগরিক তথা সিনিয়র সিটিজেন” কথাটি আনলেন। ১৮২৩ সালে আমেরিকায় আক্ষরিক অর্থে সম্ভবত বৃদ্ধাশ্রম বানানো হয়। অতি প্রাচীন গ্রিসে ও রোমে অবশ্য বৃদ্ধ বাবা-মা তথা বয়স্ক মানুষের খেয়াল রাখা নিয়ে খুব তৎপরতা ছিল। প্রায় ২০০০ খ্রিঃ পূঃ সময় পর্যন্ত তারা এর অন্যথায় হলে দেশের নাগরিকত্ব হারাত। বয়সের দিকে মানুষ কী কারণে বিচ্ছিন্ন হয়, কেন তারা জমজমাট পরিবেশে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে এই নিয়ে মানসিক চিন্তাভাবনা করতে করতে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিদেশের মনোবিদরা বলছেন নন কমিউনেকেবল ডিজিজ তথা NCD।
দেহ যেহেতু একটা চিহ্নিত মুখ্য বিষয় তাকে এড়ানো সম্ভব নয়, তার ক্ষয় হবেই কিন্তু ক্ষয়কে ক্ষয় হিসেবে না ভেবে পরিবর্তন ভাবলে হয়তো জীবনকে পোষ মানানো অনেকাংশে সহজ। আসলে এই অদৃশ্য মন যে কী প্রকারে এই দৃশ্যমান দেহের সঙ্গে জড়িত তা সংবেদনশীল মানুষ নিশ্চয়ই অনুভব করেন। শরীরে বার্ধক্য অথচ মনে যৌবন আবার শরীরে বার্ধক্য মনেও তাই হলে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ক্ষয় শীঘ্র হয়। এই বিষয়টাকে বিজ্ঞানী নিউম্যান দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন যথা “YOUNG OLD”, “OLD OLD” এই পার্থক্য কোন ভিত্তিতে তা আশা করি বন্ধুরা বুঝে গেছেন। বয়সে মানুষ একা হয়, অসহায়তা পরিলক্ষিত হয়, বলা যায় রবিঠাকুর- যাঁর মতো দার্শনিক আর হয় না, তিনি বার্ধক্যের অবসাদ পেয়েছিলেন কিন্তু তাঁর সৃষ্টি সেই মুহূর্তকে অতিক্রম করার চূড়ান্ত মন্ত্র।
বিজ্ঞানী এরিকসন “STAGES OF PSYCHOLOGICAL DEVELOPMENT”-এ বলছেন বার্ধক্যে যে দুটো জিনিস এক মানুষের মনে বিরোধ তৈরি করে তা-হলো তার নিজস্ব জীবনদর্শন বা সূত্র আর তার মুখোমুখি তাকে হারানোর ভয় বা আশা হারানোর চিন্তা তথা “INTREGITY VS DESPAIR”. ঠিক এরকমভাবেই নিউম্যান বলেছেন এই বার্ধক্য যেহেতু আর পেছনে ফিরতে পারে না তাই কোথাও কোথাও জীবনের অবিনশ্বরতাকে মানতে ইচ্ছুক হয়। উল্টোদিকে বিপন্নতাও তাকে আঁকড়ে দেয় ফলে সে এই যুদ্ধের মধ্যে যুঝতে যুঝতে বেঁচে থাকে। তাই জীবনের এই পর্বের সবচেয়ে বড় মুহূর্ত হলো সক্রিয়তাকে বজায় রাখার চেষ্টা যাতে বয়সোচিত খেলায় কোথাও জিতে যাওয়া যেতে পারে।
বিশিষ্ট লেখক রবার্ট ফ্রস্ট বলেছিলেন, “THE AFTERNOON KNOWS WHAT THE MORNING NEVER SUSPECTED.” গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ বলেছিলেন, “AGE HAS NO REALITY EXCEPT IN THE PHYSICAL WORLD. THE ESSENCE OF A HUMAN BEING IS RESISTANT TO THE PASSAGE OF TIME.OUR INNER LIVES ARE ETERNAL, WHICH IS TO SAY THAT OUR SPIRITS REMAIN AS YOUTHFUL AND VIGOROUS AS WHEN WE WERE IN FULL BLOOM. THINK OF LOVE AS A STATE OF GRACE, NOT THE MEANS TO ANYTHING, BUT THE ALPHA AND OMEGA. AN END IN ITSELF.”- এর চেয়ে অনুরণনের কথা আর কি কিছু হতে পারে, যা কেবল শুনেই মনে হয় শেষ অবধি জীবনকে বিশ্বাস করি সে যৌবন বা বার্ধক্য যাই দিক না কেন!
একটু আগে লিখছিলাম নিউম্যান বলেছেন সাধারণ প্রবীণের মধ্যে অবিনশ্বর থাকার চিন্তা আসে। এই মুহূর্তে মার্কেজের কথা কি তার থেকে খুব একটা দূরে? আসলে সত্যি তো চামড়াকে বাদ দিলে পুরোটাই তো একটা জীবনযাপন। অড্রে হেপবার্ন তার নারীত্বের গাঠনিক চিন্তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে তাই হয়তো বলতে পেরেছেন, “AND THE BEAUTY OF A WOMAN, WITH PASSING YEARS ONLY GROWS!”
হয়তো নিয়ম, আইন, ব্যবস্থা মানুষকে সাবধানে রেখেছে, গড় আয়ু বাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু এটাও সত্যি বহু স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ নিজেই এককালীন টাকা দিয়ে স্বেচ্ছায় নিজস্ব ব্যক্তিবোধে ওল্ডেজ হোমে গিয়ে থাকেন এবং তারা সেটাকে কোনো বৃদ্ধাশ্রম ভাবেন না , ভাবেন নিরাপদ সম্মানিত স্থান।