দেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও নির্মাতা পলাশ মাহবুব। লেখালেখির সাথে ছোটবেলা থেকেই যুক্ত। আর তার লেখা বই প্রকাশের শুরু এই শতাব্দীর একদম গোড়ায় অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে। সেই হিসেবে এবছর পলাশ মাহবুবের বই প্রকাশের ২৫ বছর তথা রজত জয়ন্তী। এই ২৫ বছরে প্রকাশিত হয়েছে ৬৬টির মতো বই। যার মধ্যে আছে গল্প, উপন্যাস, শিশুসাহিত্য, ছড়া, রম্যরচনা ইত্যাদি।
এ বছর এই লেখকের ৩টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে গত বছরের মেলায় তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘পমার বচন’ বইয়ের নতুন খণ্ড ‘পমার বচন ২’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরও প্রকাশিত হয়েছে ভালোবাসা ও প্রেমের ছোট ছোট জীবন ঘনিষ্ট শের-এর সংকলন ‘প্রেমাণুকাব্য’।
শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক বছর ধরে ‘লজিক লাবু’ নামে দারুণ এক এডভেঞ্চার সিরিজ লিখছেন পলাশ মাহবুব। এবছর প্রকাশিত হয়েছে লজিক লাবু সিরিজের ৭ম উপন্যাস- ‘তেরো নম্বর তুলকালাম।’ তিনটি বই-ই প্রকাশিত খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে।
‘বই প্রকাশের ২৫ বছর’ এর অনুভূতি সম্পর্কে পলাশ মাহবুব জানান, ‘কখনো ভাবিনি একটানা ২৫ বছর ধরে বই প্রকাশিত হবে। নিঃসন্দেহে অসাধারণ অনুভূতি। লেখালেখি এখন অনেকটা অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে। অভ্যাসটা ধরে রাখার চেষ্টা করবো।’
সুন্দরবনকে আমরা বৃহত্তম অখণ্ড ম্যানগ্রোভ বন হিসাবেই জানি। বিভিন্ন সময়ে এই বনকে নিয়ে গবেষণা কম হয়নি, প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যাও বিপুল। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, সুন্দরবনকে আমরা কতটা জানতে পেরেছি? বনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অংশীজন যে বনবাসী মানুষ; তাদের যাপিত জীবনের আখ্যান কতটা জানা হল আমাদের? বলা যায়, এ নিয়ে দরদ দিয়ে লেখা গ্রন্থের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল।
জীবনঘনিষ্ঠ লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহে সুন্দরবনের অধিবাসীদের নিবিড় সাহচর্যে থেকে তাদের জীবনের আখ্যান তুলে এনেছেন নিপুণভাবে। টুকরো টুকরো সেসব গল্প দিয়ে তিনি সাজিয়েছেন ‘বনের মানুষ মানুষের বন’। এবারের (২০২৫) অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত অনবদ্য গ্রন্থটিতে উৎকীর্ণ লেখায় পাঠক খোঁজে পাবেন ভিন্ন এক সুন্দরবনকে। বলা যায়, বনের সংগ্রামী মানুষকেই মূল উপজীব্য করেছেন লেখক। সহজ-সাবলীল লিপিকুশলতায় ভরিয়ে তোলা প্রতিটি অধ্যায়ে সুযোগ মিলবে সুন্দরবনকে নতুন করে জানার। লেখক নিজেই উল্লেখ করেছেন, ‘এ বইয়ের সব গদ্য দেখা থেকে লেখা। গবেষণা নয়, প্রতিবেদনও বলা চলে না।’
আলো ঝলমলে শহুর থেকে দূরের অনগ্রসর জনপদের সংগ্রামী মানুষদের জীবনের মর্মস্পর্শী গল্প অজানাই থেকে যায়। বদলে যাওয়া নাগরিক জীবনের কৃত্রিমতাকে পাশ ঠেলে ক’জনইবা প্রান্তিক মানুষের খোঁজ নেন। আট বছর ধরে অত্যাশ্চার্য এই বনের নানা প্রান্তে ছুটে বেরিয়েছেন লেখক। কথা বলেছেন অগণিত অধিবাসীর সঙ্গে। সহজ-সরল বনজীবী মানুষদের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলেছেন, টুকে নিয়েছেন তাদের অভিব্যক্তি; জীবনের গল্প।
লেখক সেখানে খোঁজে পেয়েছেন সুকুমার বাউলিয়ার মত অসাধারণ এক শিক্ষককে। নিজের স্বার্থকে তুচ্ছ করে যিনি বনের অনগ্রসর শিশুদের জোর করে ধরে এনে পাঠশালায় শিক্ষা দেন, জীবনের ৪৩টি বছর একটি ভাল পাঠকক্ষ ছাড়াই যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান। অন্ধকার জনপদে আলোকবর্তিকা হয়ে ধরা দেওয়া এমন মহত্তম শিক্ষকের জীবনের গল্প বইটিতে স্থান পেয়েছে।
২০২০ সালের ২১ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফান আঘাত হেনেছিল উপকুলে। প্রলয়ংকরী দূর্যোগ বনবাসী মানুষের জীবনে কি গভীর ছাপ ফেলে যায়, কিভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলের সাজানো সংসার-এমন অনেক অশ্রুসিক্ত বয়ানও এতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। আম্ফানে মা হারানো সুন্দরবনের দ্বীপগ্রাম ফকিরকোনার শিশু বাহাদুরের ভাগ্য বিড়ম্বনার গল্প যেমন স্থান পেয়েছে, তেমনি সুন্দরবনে শিকার করতে যাওয়া মানুষেরা কিভাবে নিজেই শিকারে পরিণত হয়, নোনাজলে মানুষদের জীবনসংগ্রামকে কিভাবে তস্করেরা আরও প্রকট করে তোলে এমন বিবরণও বাদ যায়নি এতে। বিশেষ করে সুন্দরবনের নারীরা জীবনে পদে পদে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জ কিভাবে উতরে যান, তার অনুপুঙ্খ বিবরণ গ্রন্থটিকে আরও হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে। কথা প্রকাশ প্রকাশিত বনের মানুষ মানুষের বন সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমামের ষষ্ঠ গ্রন্থ । গল্পগ্রন্থ মানুষের গল্প, বৈদিক পাখিন গান, রক্তমূলে বিচ্ছেদ, পা। যৌথভাবে সম্পাদিত প্রবন্ধের সংকলন চেতনার উত্তরাধিকার।
উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক গবেষণাপত্রের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ও পেশায় সাংবাদিক সাদিয়ার জন্ম ফরিদপুরে। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত বাংলা সাহিত্য উৎসব বিশেষ সম্মাননা।
লেখক জানান, বাংলাকে জানবো, বাঙালিকে জানবো, বাঙালিয়ানাকে মানবো। তারপর বিশ্ব ও বিশ্ববাসীকে জানবো-এটাই আধুনিকমনস্ক বাঙালির ধর্ম ও সংস্কৃতির শর্ত। এই জানা অবশ্যই হতে হবে ইতিহাস-ভূগোল, নৃ-তত্ত্ব ও ভাষাতাত্ত্বিক জ্ঞানমাহাত্ম্যে। জানবো কল্পনা ও কবির দৃষ্টিতে না জেনে যুক্তির আলোকে, তত্ত্ব-তথ্য-উপাত্তযোগে। ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে।
বাঙালিয়ানাই বাঙালি জাতিসত্তার পরিচায়ক। আমরা যে বাঙালি, বাংলা যে আমাদের দেশ, বাংলা যে আমাদের ভাষা, বাঙালিয়ানা যে আমাদের সংস্কৃতি এই বিশ্বাস ছাড়া বাঙালি শুদ্ধ বাঙালি নয়। শুদ্ধ বাঙালি হলেই বাংলা-বাঙালি-বাঙালিয়ানা বাংলা ভাষা হয়ে উঠবে আমাদের চিন্ময় ও মৃন্ময় সত্তা।
শাশ্বত বাঙালি, আধুনিক বাঙালি, অহিংস-অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাঙালি হতে হলে বাঙালি জাতি ও সংস্কৃতির অনুশীলনেই হতে হবে। ‘বাংলা ও বাঙালিয়ানা’ বইতে সেই বাঙালির রূপ-রস-সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সন্ধান মিলবে।
গাজী আজিজুর রহমানের লেখার একটি ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ করে মৃত্যু, আত্মহত্যা এবং কবিতাবিষয়ক লেখাগুলো পাঠককে বারবার ভাবিত করে, প্রশ্নমুখী করে তোলে। বিশ্বসাহিত্য, ইতিহাস, আধুনিকতা তার প্রিয় লেখালেখির বিষয়। ‘বাংলা ও বাঙালিয়ানা’ লেখকের ১২তম প্রবন্ধ গবেষণা গ্রন্থ।
সে ছিল আমার প্রথম সত্যিকারের ভালবাসা। আমরা একসঙ্গে সবকিছু করতাম, একসঙ্গে ঘুরতাম। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমার সম্পর্ক টিকে ছিল। আমার জন্মদিনে একবার সে অন্য কোন উপহারের বদলে একটি ছোটো তলোয়ার উপহার দিল। এটা সে জাপান থেকে নিয়ে এসেছিল। সেখানে ও শিক্ষক হিসেবে কাজ করতো।
থাইল্যান্ডে গত নভেম্বর থেকে যাত্রা করেছে মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশীপ
তবে সেই তলোয়ারটা ‘কাটানা’ ছিল না। সেটা ছিল ‘হারা কিরি’। যেটা কিনা আত্মহত্যার জন্য ব্যবহার করা হয়। আমার ওই জন্মদিনের কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয় তার স্মৃতি ভুলতে। পারছিলাম না, তাই ওকে ভোলার জন্য এই তলোয়ারটি দিয়ে দিলাম।’
এমনই সব হৃদয় ভাঙার গল্পের উপাদান নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপ’ বা ‘ভাঙা সম্পর্কের জাদুঘর’।
হৃদয় ভাঙার গল্পের উপাদান নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মিউজিয়াম
সম্পর্ক ভাঙা কি শুধুই দুঃখের হয়। বরং বেঁচে যাওয়াও হয়। যেমন কোরিয়ার সিউলের রমনী তার এক জোড়া গ্লোবসের সঙ্গে মিশে থাকা আর গল্প বলেছেন। ”আমার বিয়ের পরপরই আমি বিদেশে চলে যাই। এরপর যখন অপ্রত্যাশিতভাবে আবার কোরিয়ায় ফিরে আসি, শ্বশুর বাড়িতে থাকা শুরু করি। কারণ তখন আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল ছিল না।
প্রথম দিন থেকেই শ্বশুর বাড়িতে আমি ঘরের কাজের জন্য নিয়োজিত হই। আমার শ্বশুর শ্বাশুরির জন্য সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবার তৈরী করতে আমাকে পুরো দিনটাই ব্যয় করতে হতো রান্না ঘরে। আমি যদি আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বের হতাম, তখন আমার নিজের কাছে অপরাধী মনে হতো। আমাকে দ্রুত বাসায় ফিরে আসতে হতো।
দেয়ালে দেয়ালে যেন হৃদয় ভাঙার গল্প
আমার নিজের জীবন বলে আর কিছু থাকল না। একসময় অনুভব করলাম, আমি শুধু একটা কাজ করার যন্ত্রে রুপান্তরিত হয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমরা শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে এসেছি। আমি আমার শেষ রাভারের গ্লোবসটি দিলাম জাদুঘরে যেটা আমার ঘরের কাজ করা শ্রমিক হিসেবে শেষ প্রতীক। আমার মনে হচ্ছে আমি অবশেষে নিজেব জীবনকে খুঁজে পেয়েছি।
এই ধরনের প্রায় অর্ধশত গল্প ও গল্পের অনুষঙ্গের দেখা মিলবে থাইল্যান্ডের উত্তরের প্রদেশ চিয়াং মাইয়ের শহরে।
চিয়াং মাই পাহাড়ি জনপদ। শিল্পকলা এবং শিল্পীদের শহর হিসেবে পরিচিত। তাইতো মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপের একটি আউটলেট হয়েছে এখানে। শহরের কেন্দ্রে ২ তলা একটি ভবনে গড়ে উঠেছে এই জাদুঘর। যার দেয়ালে দেয়ালে যেন হৃদয় ভাঙার গল্প। যা অনেক দর্শনার্থীদের চোখের পানি ঝড়ায়।
মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপের শুরু ক্রোয়েশিয়াতে।
মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপের শুরু ক্রোয়েশিয়াতে। জাগরেব শহরের দুজন শিল্পী চলচ্চিত্র প্রযোজক ওলিঙ্কা ভিস্টিকা, এবং ভাস্কর ড্রেজেন গ্রুবিসিচ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৩ সালে তাদের চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর, দুজনে তাদের ভালবাসার স্মৃতিযুক্ত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখার জন্য একটি জাদুঘর স্থাপনের বিষয়ে রসিকতা করেছিলেন। তিন বছর পর, গ্রুবিসিচ এই ধারণা নিয়ে ভিস্টিকার সাথে যোগাযোগ করেন। তারা তাদের বন্ধুদের তাদের বন্ধুদেরকেও বলেন, তাদের প্রাক্তনের রেখে যাওয়া জিনিস দান করতে। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো জাগরেবে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এই মিউজিয়াম।
ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাদের এই মিউজিয়াম এবং বিশ্ব ভ্রমণও করে। জাগরেবের পর দ্বিতীয় শাখা হিসেবে থাইল্যান্ডে গত নভেম্বর থেকে যাত্রা করেছে মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশীপ। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের হৃদয় ভাঙার গল্প এবং বস্তু দান করে এই জাদুঘরে। সেখান থেকে প্রতি বছর বাছাই করে জাদুঘরে গল্প আর বস্তু প্রদর্শণ করা হয়।