প্রেম, দ্রোহ, মানবতা ও সাম্যের প্রতীক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের বিরাট একটি অধ্যায়জুড়ে রয়েছে কুমিল্লার নাম। কবি ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফায় ১১ মাস কুমিল্লয় ছিলেন। গোমতী নদীর এপারে প্রমীলা আর ওপারে নার্গিস ছিলেন কবির হৃদয়ের সারথী। এই দু’জনকে ঘিরেই কবি নজরুলের প্রেম আর বিরহের অনেক স্মরণীয় মূহুর্ত কেটেছে কুমিল্ল নগরী ও মুরাদনগরের দৌলতপুরে। কবি কুমিল্লার বিভিন্ন বাড়িতে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে আড্ডা দিতেন, সংগীতচর্চা ও কবিতা আবৃত্তি করতেন। লিখতেন গান ও কবিতা।
সোমবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় কবির কুমিল্লায় আগমনের শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। শুধুমাত্র শত বছর নয়, কুমিল্লায় নজরুল আর নজরুলের কুমিল্লায় তিনি থাকবেন চির অমর হয়ে। জাতীয় কবির কুমিল্লায় আগমনের শতবর্ষ বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে সকল অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে জেলা প্রশাসন।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, কুমিল্লায় জাতীয় কবির আগমনের শতবর্ষ বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করার জন্য আমরা বেশ কয়েকটি সভা করেছি, প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সকল অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব অনুষ্ঠান হবে।
কুমিল্লায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নজরুল গবেষক ড.আলী হোসেন চৌধুরী বলেন, কুমিল্লায় বিচরণের মধ্য দিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি হয়ে উঠেছিলেন। কুমিল্লায় নজরুল আর নজরুলের কুমিল্লা বিষয়টি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। জাতীয় কবির প্রেম, বিয়ে, প্রকাশ্যে সুরকার-গায়ক ও অভিনয় শিল্পী হয়ে উঠাসহ অনেক কিছুরই প্রথম শুরু কুমিল্লা থেকে। তবে কুমিল্লায় নজরুলের অনেক স্মৃতিচিহ্নগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে নজরুল ইনষ্টিটিউট কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিলো তার মোটেও প্রতিফলন নেই। এখানে নজরুলকে নিয়ে চর্চা ও গবেষণা হচ্ছে না। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে এখন পর্যন্ত কবির নামে কুমিল্লায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়নি। এসব বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় কবির দুই জীবন সঙ্গীর প্রথমজন কুমিল্লর মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের খাঁবাড়ির আলী আকবর খানের ভাগনি নার্গিস আসার খানম আর অপরজন কুমিল্লা নগরীর বসন্ত কুমার সেনগুপ্তের মেয়ে আশালতা সেনগুপ্তা দুলী। তবে কবি তাঁর নাম দিয়েছিলেন প্রমীলা। ১৯২১ সালের ২১ নভেম্বর রাজগঞ্জ বাজারে কবি ব্রিটিশবিরোধী মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর শহরের ঝাউতলা সড়কের শেষ প্রান্তে রাস্তার দক্ষিণ পাশ থেকে ‘আনন্দময়ীর আগমন’ কবিতার জন্য কবি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
১৯২১ সাল থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে কুমিল্লায় আসেন ৫ বার আসেন কবি। পাঁচ দফায় ১১ মাস কুমিল্লায় অবস্থানকালে দৌলতপুরে ছিলেন দুই মাস আর কুমিল্লা নগরীতে ৯ মাস। প্রমীলা দেবীর বাড়ি, ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ে কবিতা গানের আসর, ঝাউতলায় গ্রেপ্তার হওয়া, বসন্ত স্মৃতি পাঠাগার, নানুয়া দীঘির পাড়, দারোগা বাড়ি, ইউছুফ স্কুল রোড, মহেশাঙ্গন, কুমিল্লা বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন ও মাঠ, দক্ষিণ চর্থায় শচীন দেব বর্মনের বাড়ি, নবাব বাড়ি, ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের বাড়ি, নজরুল এভিনিউ, কান্দিরপাড়, ঝাউতলা, রানীর দীঘির পাড়, রেল স্টেশন, কোতোয়ালি থানা, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং মুরাদনগরের দৌলতপুরসহ কুমিল্লা নগরীর অসংখ্য স্থানে কবির স্মৃতি চিহৃ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যা সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানে নেই কোনো স্মৃতিফলক।